পদ্মার ঢেউয়ে সরছে মাটি, হুমকিতে রাজবাড়ীর শহর রক্ষা বাঁধ

রাজবাড়ীতে আবারও পদ্মার ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এক সপ্তাহের ব্যবধানে নদীর ডান তীর প্রতিরক্ষা প্রকল্পে তৃতীয়বারের মতো ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙন অব্যাহত থাকায় হুমকিতে রয়েছে শহর রক্ষা বাঁধ। স্থানীয়রা বলছেন, বাঁধের কাজে অনিয়মের কারণে এমনটা হচ্ছে। তাদের দাবি, বিভিন্ন সময় বাঁধের কাজ হলেও ভাঙন বন্ধ হচ্ছে না। এতে উন্নয়ন কাজের টাকা জলে যাচ্ছে। 

সর্বশেষ গত শুক্রবার বিকাল ৪টা থেকে রাজবাড়ী পৌর এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ড এবং সদরের মিজানপুর ইউনিয়নের সিলিমপুর এলাকায় শুরু হয় ভাঙন। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হলেও ভাঙন অব্যাহত থাকে। ভাঙনের কবলে পড়ে প্রায় ২০০ মিটার এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

স্থানীয় মিজানপুর ইউনিয়নের সিলিমপুর এলাকার বাসিন্দা শরীফ শেখ অভিযোগ করেন, নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্পের কাজে অনিয়ম থাকায় এই ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। নদীর তীব্র ভাঙনে এখন শহর রক্ষা বাঁধও হুমকিতে রয়েছে। 

তবে পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর বলেন, পদ্মায় পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন তীব্র হয়, কারণ ঢেউয়ের কারণে মাটি ক্ষয় হয়ে যায়। এতে সিসি ব্লকের নিচের মাটি সরে সিসি ব্লক নিচ থেকে আলগা হয়ে দেবে যায়। এ কারণে তীব্র হয় ভাঙন। ভাঙন রোধে জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে বলে জানান তিনি। 

সরেজমিনে ভাঙন এলাকায় দেখা যায়, বেশ কয়েকটি বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে আরও ৫০-৬০টি বসতভিটা। নদী পাড়ের মানুষের মাঝে বিরাজ করছে ভাঙন আতঙ্ক। তাদের ব্যাস্ততা এখন ঘরের আসবাবপত্র অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার। একই সঙ্গে তাদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

পৌর এলাকার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আলম ব্যাপারী বলেন, আমার দীর্ঘদিনের বসতভিটা নদীর গর্ভে চলে গেছে। বাড়ির আসবাবপত্র দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। ঘরটাও ভেঙে নিয়েছি কিছুটা, বাকিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

আরেক বাসিন্দা আয়নাল শিকদার বলেন, ভাঙনের ফলে হুমকির মুখে পড়েছে আমার বসতভিটা। এ অবস্থায় ঘর ভেঙে দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। জানি না এরপর কোথায় থাকবো, কী খাবো?

একই এলাকার নাসরিন বেগম বলেন, আমার বিয়ের পর এসে দেখেছি নদী কয়েক কিলোমিটার দূরে ছিল। ভাঙতে ভাঙতে এখন আমাদের বসতভিটাও নদীতে চলে যাচ্ছে। আমাদের যাওয়ার আর কোনও জায়গা নেই। এ অবস্থায় দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে মানুষকে বাস্তুহারা অবস্থা থেকে বাঁচানোর দাবি জানান তিনি।