ফজলিকে রাজশাহীর নয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির দাবি

ফজলি আমকে রাজশাহী নয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ১১টায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, ‘ফজলি আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির দ্বারপ্রান্তে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের ডিপার্টমেন্ট অব পেটেন্ট, ডিজাইন অ্যান্ড ট্রেড মার্ক বিভাগ তাদের ১০ নম্বর জার্নালে “রাজশাহীর ফজলি আম” হিসেবে স্বীকৃতির দেওয়ার জন্য কাজ করছে। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে রাজশাহীর চেয়ে ইতিহাস-ঐতিহ্য, উৎস, দৃষ্টিকোণ, উৎপাদনের পরিমাণ ও নানান দিক দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম এগিয়ে রয়েছে বহুকাল থেকে। সবদিক দিয়েই রাজশাহী নয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আমই জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য অগ্রগণ্য। তাই রাজশাহী বাদ দিয়ে ফজলি আমকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির দাবি জানান বক্তারা।’

ঘণ্টাব্যাপী চলা মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন– বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা মুনিম উদ দৌলা চৌধুরী, বিশিষ্ট গবেষক ও কলাম লেখক জাহাঙ্গীর সেলিম, ম্যাংগো ফাউন্ডেশনের সদস্য-সচিব আহসান হাবিব, চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মুনজের আলম, চেম্বারের পরিচালক শহিদুল ইসলাম, শিবগঞ্জ ম্যাংগো প্রডিউসার কো-অপারেটিভ সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল খান শামীম প্রমুখ। মানববন্ধনে একাত্মতা ঘোষণা করে বক্তব্য রাখেন– বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরাও।

মানববন্ধনে ইতিহাসবিদ ও গবেষকরা এ ঘটনাকে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, ‘দেশ বিভাগের পর থেকেই রাজশাহী এই আগ্রাসন চালিয়ে আসছে। এর আগে এই আগ্রাসনের অংশ হিসেবে রাজশাহী চাঁপাইনবাবগঞ্জের রেশমকে নিজেদের পণ্য হিসেবে জিআই স্বীকৃতি নিয়েছে। এখন আবার ফজলি আমকে নিয়ে নিতে চাইছে। এটা আর হতে দেওয়া যাবে না। ফজলি আম চাঁপাইনবাবগঞ্জের সম্পদ।’

বক্তারা বলেন, ‘চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় আম চাষের ইতিহাস দুই থেকে তিন হাজার বছরের। ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রাচীন কাল থেকেই ভারতবর্ষের মালদা তথা দক্ষিণ মালদা ছিল আম চাষের জন্য প্রসিদ্ধ। আর দক্ষিণ মালদার পুরোটা জুড়েই ছিল বতর্মান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা। জেলার প্রধান অর্থকরী ফসল আমকে ঘিরেই আর্বতিত হয় এ অঞ্চলের মানুষের জীবন-জীবিকা।

‘আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে আড়াই শ’ জাতের আম চাষ হয়। এর মধ্যে ২৩-২৪ শতাংশই সুস্বাদু ও জনপ্রিয় নাবী জাত ফজলি আম। দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে রফতানিও হচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ফজলি আম।’

এসব কারণে মানববন্ধনে উপস্থিত আম চাষি, বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা আমটির উৎস, ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ, প্রেক্ষাপট, উৎপাদনের পরিমাণ এবং বিপণনের হিসাব-নিকাশের পূর্ণ তথ্য বিশ্লেষণে নিয়ে ফজলি আমের পণ্যস্বত্ব চাঁপাইনবাবগঞ্জের অনুকূলে নিববন্ধনের দাবি জানান।  

মানববন্ধন শেষে চাঁপাইনবাবগঞ্জ কৃষি অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর একটি স্মারকলিপি দেন নেতৃবৃন্দ।