ভাড়া ২০০ টাকা, আদায় ২৮০ 

কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকা রোডে চলাচলকারী বাসে সরকার নির্ধারিত ভাড়া মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। মানসম্পন্ন সার্ভিস না দিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। তাদের দাবি বাসের মান ভালো করার পাশাপাশি সরকার নির্ধারিত ভাড়া আদায়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন তারা। 

জানা যায়, গত কয়েক বছরে কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকা চলাচলকারী গণপরিবহনে বিভিন্ন সময় ভাড়া বাড়িয়ে ১৬০ থেকে ২৫০ টাকা করা হয়। ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির পর আরও এক দফা ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এখন কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকা যেতে প্রতি যাত্রীকে গুনতে হয় ২৮০ টাকা।

তবে যাত্রীরা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর নতুন যে ভাড়া নির্ধারণ হয়েছে, তা কার্যকর হলে যাত্রীরা লাভবান হবে। কারণ তখন ভাড়া ২৫০ টাকার থেকেও কমে যাবে। 

পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কিশোরগঞ্জের গাইটাল বাসস্ট্যান্ড থেকে ঢাকা পৌঁছাতে দুটি রুট ব্যবহার করে বাস চালকরা। একটি রুটে গাজীপুরের কাপাসিয়া দিয়ে জয়দেবপুর চৌরাস্তা হয়ে মহাখালী পৌঁছায় কিশোরগঞ্জের বাসগুলো। অন্য রুটে নরসিংদীর পাঁচদোনা হয়ে ঢাকায় যায় চলাচলকারী বাসগুলো।

গাইটাল থেকে কাপাসিয়া হয়ে ঢাকার মহাখালী টার্মিনালের দূরত্ব ১১০ থেকে ১১২ কিলোমিটার। নরসিংদী হয়ে যেসব গাড়ি চলে, সেগুলোর দূরত্ব হয় ১২০ থেকে ১২৫ কিলোমিটার।

বর্তমানে সরকার নির্ধারিত ডিজেল চালিত ভাড়া প্রতি কিলোমিটার ১.৮০ পয়সা ধরলে কাপাসিয়া হয়ে যে সব বাস মহাখালী যাচ্ছে তার ভাড়া হবে ২০১ টাকা ৬ পয়সা। যেখানে আগে থেকেই নেওয়া হচ্ছে ২৫০ টাকা। বর্তমানে তা আরও বাড়িয়ে ২৮০ টাকা করা হয়েছে। অন্যদিকে নরসিংদী হয়ে ঢাকা পৌঁছাতে বাসগুলো ১২৫ কিলোমিটার দূরত্ব অতিক্রম করতে হয়। সে হিসাবে ভাড়া আসে ২২৫ টাকা। তবে বর্তমানে নেওয়া হচ্ছে ৩০০ টাকা। 

কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকার পথে অনন্যা, অনন্যা ক্লাসিক, অনন্যা সুপার, যাতায়াত ও ঈশাখাসহ বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির বাস চলাচল করে। সব বাসের ভাড়াই বাড়ানো হয়েছে।  

তবে যাত্রীরা বলছেন, বাসের মান নিয়ে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ ছিল জেলাবাসীর। এর ওপর নিজেদের খেয়াল মতো ভাড়া বাড়ানো কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। 

কিশোরগঞ্জ সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের সমন্বয়ক এনায়েত করিম অমি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কিশোরগঞ্জ-ঢাকা রুটে বাস ভাড়া বাড়িয়ে বাস মালিকরা সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম করেছেন। এর আগেও সরকারের নির্ধারিত ভাড়ার তোয়াক্কা না করে তারা ভাড়া বাড়িয়েছিল। তখন সাধারণ মানুষকে নিয়ে সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের ব্যানারে আমরা আন্দোলন করেছি। আন্দোলনের মুখে জেলা প্রশাসকের মধ্যস্থতায় কিছুদিন ভাড়া ঠিক রাখলেও, পরে আবার বাড়িয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে যে হারে ভাড়া নেওয়া হচ্ছে সেটা অন্যায়। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ জেলা মালিক সমিতির সদস্যসচিব শেখ ফরিদ আহাম্মদ বলেন, আমরা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কোনও ভাড়া নির্ধারণ করে দেইনি। বাস কোম্পানিগুলো নিজেরা ভাড়া ঠিক করে চালাচ্ছেন। ভাড়া নির্ধারণ করবে বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। আমরা বার বার বিআরটিএ’র সঙ্গে যোগাযোগ করছি ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য। বিআরটিএ থেকে ভাড়া নির্ধারণ করে দিলেই আর কোনও সমস্যা থাকবে না।

কিশোরগঞ্জ বিআরটিএ’র সহকারী পরিচালক মো. বখতিয়ার উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, দূর পাল্লার বাসের ভাড়া আমরা লোকালভাবে নির্ধারণ করতে পারি না। আমাদের সেন্ট্রাল অফিস থেকে সেই ভাড়া নির্ধারণ করে দেওয়া আছে। যে সব বাস সরকারের নির্দেশনা মানছে না, তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বেশ কিছু মামলা ও জরিমানা হয়েছে বলে জানান তিনি।