মা-মেয়েকে গলা কেটে হত্যা, গ্রেফতার ২

গাজীপুরে জবাই করে মা-মেয়ে হত্যার ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করেছে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ (জিএমপি)। পুলিশ খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত দুটি চাকু, মোটরসাইকেল এবং নিহতের ব্যাগ উদ্ধার করেছে। শনিবার (২৭ নভেম্বর) জিএমপির উপ-কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) জাকির হাসান সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রেফতারকৃতরা হলো, গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের সালদিয়া গ্রামের সাত্তার খানের ছেলে জাহিদুল ইসলাম খান (২১) এবং একই গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে ও নিহত ফেরদৌসির জামাতা মহিউদ্দিন ওরফে বাবু (৩৫)।

আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জাকির হাসান জানান, প্রায় দুই বছর আগে প্রথম স্বামীর সঙ্গে ডিভোর্সের পর গাজীপুর সদর উপজেলার খুদেবরমী গ্রামের রবিউল ইসলামকে বিয়ে করেন দুই সন্তানের মা ফেরদৌসি আক্তার (২৮)। ফেরদৌসী কালীগঞ্জ উপজেলার জাঙ্গালীয়া ইউনিয়নের বড়াইয়া গ্রামের মৃত বাছির উদ্দিন বছুর মেয়ে। তিনি প্রথম সংসারের দুই সন্তান হাফসা আক্তার (১০) ও তাসমিয়া আক্তারকে (৪) নিয়ে মহানগরীর হাড়িনাল এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। গার্ডিয়ান লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে মাঠকর্মী হিসেবে চাকরি করতেন ফেরদৌসি। পরে একই প্রতিষ্ঠানে চাকরি পাইয়ে দেন ভাতিজি লিমা আক্তারকে। চাকরি পাওয়ার পর প্রায় তিন মাস আগে লিমা তার স্বামী মহিউদ্দিন ওরফে বাবুকে ডিভোর্স দেন। বাবু বিয়ে বিচ্ছেদের ঘটনায় ইন্ধনদাতা হিসেবে ফুফু-শাশুড়ি ফেরদৌসিকে দায়ী করেন। স্ত্রীকে ফিরে পেতে বাবু বিভিন্ন কবিরাজের কাছে ধরনা দিয়ে ব্যর্থ হয়। এদিকে, ইনস্যুরেন্সের পাওনা কিস্তির টাকা চাওয়ায় ফেরদৌসির ওপর ক্ষুব্ধ হয় বাবু। এরপর বাবু তার বন্ধু জাহিদুলকে নিয়ে ফেরদৌসিকে হত্যার পরিকল্পনা করে।   

তিনি আরও জানান, পরিকল্পনা অনুযায়ী জাহিদুল গত ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় বোনের বিমা করার কথা বলে ফেরদৌসিকে বাসা থেকে ডেকে আনে। মেয়ে তাসমিয়াকে নিয়ে ফেরদৌসি জাহিদুলের সঙ্গে একই রিকশায় মহানগরীর দেশিপাড়ার বিমান বাহিনীর টেক এলাকায় যান। সেখানে নির্জন এলাকায় পৌঁছামাত্রই ফেরদৌসীর গলায় ছুরিকাঘাত করে জাহিদুল। এ সময় ধস্তাধস্তিতে জাহিদুলের হাত কেটে যায়। ঘটনাস্থলে আগে থেকে অপেক্ষমাণ বাবু চাকু দিয়ে আহত ফেরদৌসির গলার অপর অংশ কেটে ফেলে। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় ফেরদৌসির। এ ঘটনা দেখে তাসমিয়া কান্নাকাটি শুরু করলে তাকেও মুখ চেপে ধরে গলা কেটে হত্যা করে জাহিদুল। পরে তারা নিহত ফেরদৌসির মোবাইল ফোন ও হ্যান্ডব্যাগ নিয়ে মোটরসাইকেলে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। পথে তারা ব্যাগটি একটি ঝোঁপের মধ্যে এবং মোবাইল ফোন ও হত্যায় ব্যবহৃত চাকু দুটি সালদিয়া গ্রামের একটি পুকুরে ফেলে দেয়। পুলিশ মধ্যরাতে ঘটনাস্থল থেকে নিহতদের লাশ উদ্ধার করে। পরে বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ প্রথমে জাহিদুলকে ও পরে বাবুকে এ ঘটনায় গ্রেফতার করে। তাদের স্বীকারোক্তি ও তথ্যের ভিত্তিতে নিহতের হ্যান্ডব্যাগ এবং হত্যায় ব্যবহৃত দুটি চাকু ও মোটরসাইকেল উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের ভাই ইজ্জত আলী বাদী হয়ে সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। শনিবার গ্রেফতারকৃতদের আদালতে পাঠানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) রেজোয়ান আহমেদ, সহকারী পুলিশ কমিশনার (সদর জোন) রিপন চন্দ্র সরকার, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম ও ইন্সপেক্টর (তদন্ত) সৈয়দ রাফিউল করিম।