স্ত্রীকে গলা টিপে হত্যা, ১২ ঘণ্টার মধ্যে চার্জশিট দিলো পুলিশ 

গাজীপুরের কাপাসিয়ায় স্ত্রী মারুফা আক্তারকে (১৪) গলা টিপে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়েরের ১২ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী ইমনকে (১৯) গ্রেফতার করা হয়েছে। মিথ্যা অপবাদে বিতাড়িত হওয়ার পর শ্বশুরবাড়িতে পুনরায় যেতে না চাইলে স্ত্রীকে গলা টিপে হত্যার কথা স্বীকার করে ইমন। সোমবার (৬ ডিসেম্বর) গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সানোয়ার হোসেন এসব তথ্য জানিয়েছেন।

গ্রেফতারকৃত ইমন শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের বরকুল গ্রামের এমদাদুল হকের ছেলে।

কাপাসিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ এফ এম নাছিম জানান, শ্রীপুরের বরকুল গ্রামের নানার বাড়িতে থেকে মারুফা স্থানীয় বরমী বাজার উচ্চ বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতে লেখাপড়া করতো। একই গ্রামের ইমন তাকে স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে প্রায়ই প্রেমের প্রস্তাব দিতো। একপর্যায়ে তাদের মধ্যে প্রেমেরে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বছর খানেক আগে তারা বিয়ে করে। ইমন কোনও কাজকর্ম না করায় দাম্পত্য জীবনে কলহ দেখা দেয়।

সম্প্রতি ইমন মাওনা এলাকার একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেয়। কয়েকদিন ধরে মারুফা বাবার বাড়িতেই ছিল। শুক্রবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে ইমন শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে যায়। রাতের খাবার খেয়ে স্বামী-স্ত্রী ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে মেয়ের বাবা ঘুম থেকে উঠে ঘরে মেয়ের লাশ দেখতে পান।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সানোয়ার হোসেন জানান, গত কয়েকদিন আগে শ্বশুরবাড়িতে চুরি করার অপবাদ দিলে মারুফা রাগ করে প্রথমে নানির বাড়ি এবং পরে বাবার বাড়ি চলে আসে। স্ত্রীকে পুনরায় বাড়ি নিতে ইমন শুক্রবার দুপুরে শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে যায়। মারুফাকে শ্বশুরবাড়ি ফিরে যেতে বললে অসম্মতি জানায়। এতে ক্ষুব্ধ হয় ইমন। এ ঘটনার পর রাতে বাড়ির সবাই খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। গভীর রাতে ঘুমন্ত স্ত্রী মারুফাকে গলা টিপে হত্যা করে ইমন। পরে জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মেয়ের লাশ খাটের ওপর পড়ে থাকতে দেখেন বাবা মাসুদ মিয়া। খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়।

নিহতের পরিবার জানায়, মারুফাকে গলা টিপে হত্যার কথা স্বীকার করে পরদিন শনিবার বেলা ১১টায় ইমন নিহতের বাবাকে মোবাইল ফোনে জানিয়েছে। এ সময় ইমন জানায়, স্ত্রী মারুফাকে হত্যার পর নিজেও ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে পালিয়ে যায়।  

পুলিশের ওই কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে ইমনের বিরুদ্ধে কাপাসিয়া থানায় মামলা করেন। পুলিশ আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ইমনকে শ্রীপুরের বরমী ইউনিয়নের সাতখামাইর রেলস্টেশন এলাকা থেকে গ্রেফতার করে। ইমন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। মামলা দায়েরের পর ১২ ঘণ্টার মধ্যে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন সংগ্রহ ও রহস্য উদঘাটন এবং মামলার কার্যক্রম সম্পন্ন করে আদালতে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ।