তৈমুর বলছেন আমি জনগণের প্রার্থী, আইভী বললেন শামীম ওসমানের

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারকে এমপি শামীম ওসমানের প্রার্থী বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। তবে নিজেকে জনগণের প্রার্থী বলে দাবি করে তৈমুর আলম বলেছেন, আমি শামীম ওসমানের পায়ে ভর করে চলি না।

শনিবার (০৮ জানুয়ারি) সকালে নারায়ণগঞ্জের বন্দরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের দেউলী চৌরাপাড়া এলাকায় গণসংযোগের সময় এ মন্তব্য করেন আইভী। পাশাপাশি সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জালকুড়ি মধ্যপাড়া, পশ্চিমপাড়াহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগকালে এই দাবি করেন তৈমুর আলম।

সেলিনা হায়াৎ আইভীর অভিযোগ, তৈমুর আলম সরকারি দলের একাংশের সমর্থন নিয়ে মাঠে নেমেছেন। তার পক্ষে আওয়ামী লীগের কিছু লোকজন কাজ করছেন।

তৈমুর আলমের অভিযোগ, আইভী সরকারি দলের নেতাকর্মীদের দিয়ে মাঠে সভা-সমাবেশ করে নির্বাচনি বিধি ভঙ্গ করছেন।

দুই প্রার্থীর পাল্টাপাল্টি অভিযোগের মধ্য দিয়ে প্রচার-প্রচারণায় সরব হয়ে উঠেছে পুরো নগরী। নির্বাচনের সাত দিন বাকি। শনিবার সকাল থেকে সিটি করপোরেশনের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের দেউলী চৌরাপাড়া এলাকায় প্রচারণা চালান আইভী। বিকালে তিনি ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে প্রচারণা চালান।

এ সময় আইভী বলেন, তৈমুর আলম গডফাদার শামীম ওসমানের প্রার্থী। এটা ইতোমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার বন্দরে তৈমুর আলম প্রচারণা চালিয়েছেন। জাতীয় পার্টির এমপি সেলিম ওসমানের চার জন চেয়ারম্যান তার প্রচারণায় যোগ দিয়েছেন। এতে প্রমাণিত হয় নারায়ণগঞ্জে যে গুঞ্জন ছিল, তৈমুর আলম গডফাদার শামীম ওসমানের প্রার্থী; বৃহস্পতিবার তৈমুরের প্রচারণায় তা প্রমাণিত হয়েছে। তৈমুর আলম জনগণের প্রার্থী নন, বিএনপিরও প্রার্থী নন। তিনি শামীম ওসমানের প্রার্থী।

আইভী বলেন, আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে আছেন। প্রত্যেক ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা আমার সঙ্গে মাঠে কাজ করছেন। একমাত্র শামীম ওসমান তার লোকজনকে ইন্ধন দিচ্ছেন। তৈমুর আলমের প্রচারণায় কারা কারা এসেছেন, সব দেখছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা।

তিনি বলেন, একটি কথা আপনাদের বলতে চাই, আমি নির্বাচন করি জনগণের শক্তি নিয়ে। জনতাই আমার শক্তি। আওয়ামী লীগ আমার মনোবল। গডফাদারের দিকে তাকিয়ে আমি নির্বাচন করছি না।

অপরদিকে, সকাল থেকে তৈমুর আলম সিটি করপোরেশনের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের জালকুড়ি মধ্যপাড়া, পশ্চিমপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন।

এ সময় তিনি বলেন, সর্বস্তরের জনগণ নিয়ে আমি নির্বাচনি মাঠে নেমেছি। প্রধানমন্ত্রী যদি নারায়ণগঞ্জের ভোটার হতেন তাহলে আমি তার কাছেও ভোট চাইতে যেতাম। আমার দৃঢ় বিশ্বাস তিনি আমাকে ভোট দিতেন।

তৈমুর আলম বিলেন, বিগত ৫০ বছরের স্বচ্ছ কর্মকাণ্ড ও গণমুখী কার্যক্রমের জন্য প্রধানমন্ত্রী আমাকেই ভোট দিতেন। মানুষ যখন একজন স্বচ্ছ প্রার্থী খুঁজছিল তখন তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আমি প্রার্থী হয়েছি।

আইভীর অভিযোগের বিষয়ে তৈমুর আলম বলেন, আমি শামীম ওসমানের পায়ে ভর করে চলি না। আমি যখন নারায়ণগঞ্জে রাজনীতি শুরু করি শামীম ওসমান তখন ছাত্র। আমি নারায়ণগঞ্জের মাটি ও মানুষের পক্ষে কাজ করেছি। রিকশাশ্রমিক, ঠেলাগাড়ি ও শ্রমজীবী মানুষের পক্ষে কাজ করেছি। আমি কোনও ভাই কিংবা বোনের প্রার্থী নই।

তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের খেটে খাওয়া মানুষ, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ, ছাত্র ও মহিলা সমাজ, দলমত নির্বিশেষে আমার পক্ষে মাঠে নেমেছেন।

শামীম ওসমান ও আওয়ামী লীগের সমর্থন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি তো আওয়ামী লীগের ভোটও চাই। প্রধানমন্ত্রীর ভোট ও সমর্থন চাই। আমি সবার কাছে ভোট চাইতে যাই। তিনি (আইভী) যার নাম বলেছেন তিনি (শামীম ওসমান) আওয়ামী লীগের এমপি। শহরের ভোটার, জনপ্রতিনিধিত্ব করছেন। আমি তারও ভোট এবং সমর্থন চাই। তার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক নেই আমার।

তৈমুর আলম আরও বলেন, আমি মাঠে নেমেছি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে। আমি দলের প্রার্থী নই, জনগণের প্রার্থী। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ২০১৮ সালে বলেছিলেন, তৈমুর আলম জয়ী হওয়ার মতো প্রার্থী।

এদিকে, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলররা সকাল থেকে রাত পর্যন্ত প্রচারণা চালাচ্ছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট চাচ্ছেন তারা।