শরীয়তপুরে হাসপাতালে বেড়েছে ডায়রিয়া রোগী, শিশুই বেশি 

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী বেড়েছে। তাদের মধ্যে শিশুদের সংখ্যাই বেশি। বেডের চেয়ে দ্বিগুণ রোগী ভর্তি হওয়ায় চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্মীদের। চিকিৎসকরা মনে করছেন, শীতের কারণে হঠাৎ করেই রোগী বেড়েছে। এ ছাড়া হঅন্তঃসত্ত্বা রোগী ভর্তি হওয়ার সংখ্যাও বেড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

হাসপাতাল সূত্র জানায়, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা গত এক সপ্তাহে দুই শতাধিক ছাড়িয়ে গেছে। এর মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগই শিশু। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় ওয়ার্ডে জায়গা না থাকায় মেঝে ও হাসপাতালের বারান্দায় রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে অন্তত ২০ জন করে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হচ্ছে। ১৪ জনের বেডের বিপরীতে ডায়রিয়া রোগী ভর্তি হয়েছে ৪২ জন। 

এদিকে অন্তঃসত্ত্বার রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়া অন্তঃসত্ত্বা রোগীর সংখ্যা ৫৫, বিপরীতে বেড আছে ২০টি। এ ছাড়া সার্জারি, সাধারণ ঠান্ডা-কাশি ও জ্বরের রোগীও বেড়েছে।  

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১০০ শয্যার শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় পুরুষ ও নারী রোগীদের মেডিসিন, সার্জারি, অর্থোপেডিক, গাইনিসহ ৯টি ওয়ার্ডের ৮০টি শয্যায় চিকিৎসা দেওয়া হয়। আর হাসপাতালের তৃতীয় তলায় ২০ শয্যায় করোনার উপসর্গ থাকা রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। বর্তমানে ৮০টি শয্যায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে ১৭৫ জন রোগীকে। অন্যদিকে বর্তমানে হাসপাতালটিতে ৫০ চিকিৎসকের বিপরীতে মাত্র ১৯ জন কর্মরত আছেন।

এদিকে চিকিৎসক সংকটের জন্য ঠিকমতো সেবা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন রোগীর স্বজনরা। এ ছাড়া হাসপাতালের পরিবেশও ভালো না বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

ডামুড্যা ধানকাটি ইউনিয়ন থেকে ইকবাল হোসেন নামে এক ব্যক্তি তার বোনকে নিয়ে এসেছেন হাসপাতালে। তিনি জানান, হঠাৎ করে জ্বর-সর্দি ও কাশির পর পাতলা পায়খানা শুরু হয়। বাড়িতে কোনও সমাধান না হওয়ায় হাসপাতালে আসতে হয়েছে। বেড না পেয়ে ফ্লোরে অবস্থান করতে হয়েছে।

সদর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়ন থেকে লাবনি আক্তার নামে এক নারী অভিযোগ করেন, রাতে মাকে নিয়ে এসেছি। তবে সকালেও কোনও ডাক্তার আসেননি। নিচে ফ্লোর করে মাকে নিয়ে আছি।  

জাজিরা থেকে আসা ঝর্ণা আকতার জানান, আমার নাতিকে নিয়ে এসেছি। হাসপাতালে এসেছি সুস্থ হওয়ার জন্য। কিন্তু এখানে যে অবস্থা, এতে নাতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। হাসপাতালে এসে বেড পাইনি। চাদর বিছিয়ে মেঝেতে শুয়েছি। দুটি মাত্র টয়লেট রয়েছে, তার অবস্থাও করুণ।

নড়িয়া চামটা থেকে আসা কামরুন নাহার আক্তার জানান, আমার ভাতিজাকে এখানে নিয়ে এসেছি। সে ডায়রিয়ার রোগী। গতকাল এসেও কোনও বেড পাইনি। ডাক্তারও তেমন আসেন না। টয়লেটের অবস্থাও খুব খারাপ।

সিভিল সার্জন অফিসের পরিসংখ্যানবিদ সেলিনা আক্তার জানান, গত সপ্তাহের চেয়ে এ সপ্তাহে হঠাৎ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে।

সদর হাসপাতালেন ডায়রিয়া ওয়ার্ডের সিনিয়র স্টাফ নার্স সিবু রায় বলেন, বেশি রোগী থাকলে দু’জন করে এবং কম থাকলে একজন নার্স রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। ডায়েরিয়া ওয়ার্ডে রয়েছে ১৪টি বেড, তবে রোগী সংখ্যা অনেক বেশি। তাই মেঝেতে রাখতে হচ্ছে তাদের। 

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে মহিলা ওয়ার্ডের নার্সিং ইনচার্জ নাহিদা আক্তার বলেন, মহিলা ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। ৪০ জনের বিপরীতে ১১০ জনকে চিকিৎসা সেবা দিতে হচ্ছে। রোগীদের চিকিৎসা দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে।

শরীয়তপুর সদর হাসপাতাল অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের মেডিক্যাল অফিসার ডা. মো. আবদুর রশিদ জানান, অন্তঃসত্ত্বা রোগীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। আগে সিজার থাকতো এক থেকে দুইটা। এখন প্রতিদিন পাঁচ থেকে ছয় জন রোগীকে সিজার করাতে হয়। এতে আমাদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, রোগীর চাপ বেড়েছে। জনবল সংকটের মধ্যে একদিকে করোনায় আক্রান্ত এবং অন্যদিকে সাধারণ রোগীদেরও সেবা দিতে হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ধারণা করা হচ্ছে শীত বেড়ে যাওয়ায় ডায়েরিয়া ও জ্বরসহ বিভিন্ন ধরনের রোগী বেড়েছে। সাধ্যমতো সেবা দেওয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানান তিনি।

সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল্লাহ্ আল মুরাদ জানান, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়া রোগী বেড়েছে। আমরা ডায়রিয়া রোগীদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।