ইউটিউব দেখে আনার চাষ করে সফল কলেজছাত্র 

আনার চাষ করে সফলতা পেয়েছেন কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার কলেজছাত্র মো. ফয়সাল। ইউটিউব দেখে ও স্থানীয় কৃষি অফিসের সহযোগিতায় পতিত জমিতে আনার চাষ করেন তিনি। প্রথম বছরে বেশি লাভ না হলেও আগামী বছর ১০ লাখ টাকা লাভের আশা করছেন। তার সফলতা দেখে এলাকার অনেকেই আনার চাষের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
 
পাকুন্দিয়া উপজেলার ষাইটকাহন গ্রামের বাসিন্দা ফয়সাল পাকুন্দিয়া ডিগ্রি কলেজে পড়াশোনা করেন। ইউটিউব দেখে তার আগ্রহ জাগে আনার চাষের।
 
স্থানীয় কৃষি অফিসের সহযোগিতায় চুয়াডাঙ্গা থেকে ভারতীয় জাতের ১৫০টি আনারের চারা সংগ্রহ করেন তিনি। বাড়ির পাশে পতিত এক বিঘা জমিতে আনারের চাষ করেন। আনার চাষ করতে জমি তৈরি, চারা রোপণ, সার ও কীটনাশক বাবদ তার খরচ হয় আড়াই লাখ টাকা। প্রথম বছরেই আনার বিক্রি করেন তিন লাখ টাকার। আগামী বছর বাগান থেকে ১০ লাখ টাকার বেশি আনার বিক্রি করার আশা করছেন ফয়সাল।
 
আনার চাষি ফয়সাল বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমি পড়াশোনার পাশাপাশি ইউটিউব দেখে আনার চাষ সম্পর্কে জেনে চাষের উদ্যোগ নিই। বাড়ির পাশে একটি পতিত জমিকে আনার চাষের জন্য প্রস্তুত করি। স্থানীয় কৃষি অফিসে যোগাযোগ করি চারা সংগ্রহের জন্য। বাংলাদেশে এই ফল চাষ হয় না বললেই চলে। এ অবস্থায় চুয়াডাঙ্গা থেকে চারা সংগ্রহ করে আমি বাগানটি করেছি। ছয় মাসেই আমার বাগানে ফল ধরেছে। আশা করছি, আগামী বছর ১০ লাখ টাকার ফল বিক্রি করতে পারবো। এখন আশপাশের অনেকেই আমার পরামর্শ নিতে আসেন। তারাও বাগান করবেন।
 
ফয়সালের আনার চাষের গল্প এখন এলাকাবাসীর মুখে মুখে। প্রতিদিন এলাকার কৃষকরা আসছেন আনার বাগান দেখতে। আনার বাগানের ভালো অবস্থা দেখে অনেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছেন বাগান করার।
 
স্থানীয় কৃষক জসিম উদ্দিন বলেন, ফয়সাল যে আনার বাগানটি করেছেন তা দেখে আমি খুবই আনন্দিত। বাংলাদেশে আনার চাষ করা যায়, এটা আমার বিশ্বাসই হতো না। প্রথম প্রথম তার এই বাগান করার কথা শুনে পাগলামি মনে হয়েছে। কিন্তু ছয় মাসেই ফলন হয়েছে। গাছও ছয় মাসে অনেক বড় হয়েছে। এখন আমিও একটি আনার বাগান করার চিন্তা করছি। মাঝেমধ্যে ফয়সালের বাগান দেখতে আসি।
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, স্থানীয় কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা ফয়সালের আনার বাগান নিয়মিত পরিদর্শন করেন। সেই সঙ্গে সব ধরনের কারিগরি পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করছেন তারা। তাছাড়া এই এলাকায় কীভাবে আরও আনার বাগান সম্প্রসারিত করা যায়, সে ব্যপারে কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
 
পাকুন্দিয়ার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, এই এলাকার তরুণ ফয়সাল ইউটিউব দেখে আনার বাগান করার উদ্যোগ নেন। আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে পরামর্শ ও সহযোগিতা করি। যেহেতু আমাদের দেশে আনার চাষ একেবারেই নতুন সেহেতু চারা সংগ্রহ করতে গিয়ে আমাদের অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। অবশেষে চুয়াডাঙ্গা থেকে ভারতীয় আনারের চারা কিনে এই বাগান করতে হয়েছে। বাগানের যে অবস্থা তাতে ধারণা করা যায়, অবশ্যই লাভবান হবেন ফয়সাল। তিনি আনার চাষে এখানে সফলতা দেখিয়েছেন।
 
কিশোরগঞ্জ জেলার খামার বাড়ির উপপরিচালক মো. ছাইফুল আলম বলেন, এদেশে যে আনার চাষ করা সম্ভব তা এলাকার কৃষকরা জানতেন না। ফয়সালের মাধ্যমে জেলায় আনার চাষ সম্প্রসারিত হবে। এদেশে এটি একটি আমদানি নির্ভর দামি ফল। অন্য কৃষকরা আগ্রহী হলে দেশেই এর বিস্তার ঘটানো সম্ভব।