বন্ধক রাখা গহনা ফেরত চাওয়ায় মার্জিয়াকে হত্যা করে মাসুদ

মানিকগঞ্জে নারীর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধারের রহস্য উন্মোচন হয়েছে। বন্ধক রাখা গয়না ফেরত চাওয়ায় মার্জিয়া আক্তার নামে ওই নারীকে হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রধান আসামি মাসুদসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মার্জিয়া সিংগাইর উপজেলার চারিগ্রাম গ্রামের মোশারফ হোসেনের মেয়ে।

শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) দুপুরে মানিকগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান এক প্রেস ব্রিফিংয়ে হত্যার রহস্য উন্মোচন এবং ১১ দিনের মাথায় হত্যায় জড়িত প্রধান আসামিকে গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি জানান, টাকার প্রয়োজনে নিজের স্বর্ণালংকার বন্ধক রেখে একই বাসার এক ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ধার নেন মার্জিয়া। পরে ধার নেওয়া সেই টাকা দিয়ে স্বর্ণালংকার ফেরত চাইলে, তা দিতে অস্বীকার করে শেখ মাসুদ। স্বর্ণালংকার আত্মসাৎ করতে মাসুদ ও তার স্ত্রী মিলে মার্জিয়াকে হত্যা করে। মার্জিয়াকে ঢাকার ভাড়া বাসায় খুন করে কাগজের প্যাকেটে মুড়িয়ে বস্তায় ভরে নিজ এলাকার ফেলে রাখে।

সিংগাইর থানার ওসি সফিকুল ইসলাম মোল্যা জানান, স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়ার পর একা ঢাকায় থাকতেন মার্জিয়া। মীরপুরে মাসুদের ভাড়া করা বাসায় সাবলেট হিসেবে ভাড়া থেকে ডেন্টাল হাসপাতালে কাজ শিখছিলেন। তিনি স্বর্ণালংকার মাসুদকে দেন বন্ধক রেখে টাকা এনে দেওয়ার জন্য। মাসুদ সেটা বন্ধক না রেখে তা বিক্রি করে দেন। মার্জিয়াকে জানানো হয়, ২০ হাজার টাকায় স্বর্ণালংকার বন্ধক রাখা হয়েছে। 

গত ডিসেম্বরে মার্জিয়া ২০ হাজার টাকা মাসুদকে ফেরত দিয়ে স্বর্ণালংকার চান। এ নিয়ে মার্জিয়ার সঙ্গে মাসুদের কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে গত ২৪ ডিসেম্বর সকালে মার্জিনাকে গলায় গামছা দিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করে মাসুদ। এরপর স্ত্রী রেখার সহায়তায় জবাই করে কাগজের কার্টনে প্যাকেট করে। ওই দিন সন্ধ্যার পর একটি সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া করে প্যাকেট ভর্তি লাশ বস্তায় উপজেলার ওয়াইজনগর গ্রামে একটি খালে ফেলে দেয়। হত্যাকাণ্ডের ২১ দিন পর ১৪ জানুয়ারি পুলিশ বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে অজ্ঞাত হিসেবে দাফনের ব্যবস্থা করে। পরে সিংগাইর থানায় হত্যা মামলা করা হয়।

এ ঘটনায় তদন্ত নামে পুলিশ। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিংগাইর থানার উপপুলিশ পরিদর্শক আব্দুল হালিম ১১ দিন তদন্ত করে নারায়ণগঞ্জ থেকে শেখ মাসুদ (৩৮) ও তার স্ত্রী রেখাকে (৩৩) গ্রেফতার করেন। 

জিজ্ঞাসাবাদে মাসুদ হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে। এরপর কাঁচপুর এলাকা থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত চাকু ও নিহতের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে মার্জিয়ার পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এরপর মার্জিনার ভাই মহিদুর রহমান ও বোন লিপি আক্তার ছবি দেখে শনাক্ত করেন।

পুলিশ সুপার জানান, শুক্রবার বিকালে আসামিদের ১৬৪ ধারার জবানবন্দির জন্য আদালতে তোলা হয়। আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবান বন্দি দিয়েছে তারা।