সাফারি পার্কে ৯ জেব্রার মৃত্যু

৬০ একর জায়গায় ৭০টি প্রাণী, প্রয়োজন ১৮০ একরের

গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কের আফ্রিকান সাফারিতে জেব্রা, ওয়াইল্ডবিস্ট, জিরাফ, কমন ইল্যান্ড ও গোয়ালসহ সাত প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। শিয়াল ও বানরসহ সাত প্রজাতির প্রাণী এই হিসাবের বাইরে। এসব প্রাণীর খাদ্য সরবরাহ ও পরিচর্যায় আরও যত্নশীল হওয়ার দাবি জানিয়েছেন দর্শনার্থীরা। শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) পার্কের বিভিন্ন প্রাণীর বাসস্থান ঘুরে ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং দর্শনার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

পার্ক সূত্র জানিয়েছে, আফ্রিকান সাফারিতে সাত প্রজাতির ৭০টি প্রাণী রয়েছে। পার্কের যাত্রার শুরু থেকে আফ্রিকান সাফারির আয়তন ছিল প্রায় ৬০ একর। তখন প্রাণীর সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পার্কে প্রাণীর সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। কিন্তু আয়তন বাড়েনি পার্কের। ৭০টি প্রাণীর জন্য এখন কমপক্ষে ১৮০ একর জায়গার প্রয়োজন।

শুক্রবার পার্কে ঘুরতে আসেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা সৈকত হাসান। তিনি বলেন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, হাইজেনিকের বিষয়টির প্রতি খেয়াল করা দরকার। জেব্রার কালার অ্যাশ বিবর্ণ হয়ে গেছে। তাদের আরও বেশি যত্ন নেওয়া দরকার। ভল্লুকের খাবার দেওয়ার ক্ষেত্রে কলা বা মিষ্টি কুমড়া যেভাবে রাখা হয়েছে তা একটু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নভাবে রাখা যেতে পারে। খাবার দেওয়ার ক্ষেত্রে আরও একটু যত্নশীল হওয়া দরকার।

আরও পড়ুন: শ্বাসকষ্ট শুরুর ২৫ মিনিটে মারা যাচ্ছে সাফারি পার্কের জেব্রা 

সপরিবারে ঢাকার বাড্ডা থেকে পার্ক পরিদর্শন আসা পারুল আক্তার বলেন, করোনার আগে এসেছিলাম, এখন আবারও এলাম। পার্কের প্রতি মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি উচ্চমানের। সে অনুযায়ী ঢাকা চিড়িয়াখানার মতো অনেকগুলো প্রাণী থাকলে ভালো হতো। প্রাণীর সংখ্যা কম, আয়তন বাড়ানো প্রয়োজন।

প্রাণীর সংখ্যা বাড়লেও, আয়তন বাড়েনি পার্কের

টঙ্গীর তিস্তা গেট এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো. তন্ময় বলেন, কোর সাফারিতে টিকিটের মূল্য ৫০ টাকা বাড়িয়ে দেড়শ টাকা করা হয়েছে। কিন্তু সেই অনুযায়ী সেবা বাড়ানো হয়নি।

একই অভিযোগ করে উত্তরা থেকে আসা দর্শনার্থী তুষার আহমেদ বলেন, পার্কের প্রাণীগুলোর প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া দরকার। একটি বাঘ দেখলাম রোগাক্রান্ত। প্রাণীগুলোর প্রতি আরও যত্নশীল হওয়া উচিত পার্কের দায়িত্বশীলদের।

একই এলাকার ইয়াহিয়া খান বলেন, আগে কোর সাফারির টিকিটের মূল্য ছিল ১০০ টাকা। এখন ৫০ টাকা বাড়িয়ে ১৫০ টাকা করা হলেও সে তুলনায় সার্ভিস পাচ্ছি না। ভ্রমণ বাসের ভেতর এসি নেই, ফ্যান ঘুরে না। কোর সাফারির রাস্তাগুলো সংস্কার করা হয়নি। এটি একটি আন্তর্জাতিক মানের সাফারি পার্ক। এখানে শুধু দেশের নয়, বাইরের পর্যটকরাও আসেন। পার্ক এবং প্রাণীদের প্রতি যত্নশীল না হলে বিদেশি পর্যটকদের কাছে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে। 

আরও পড়ুন: বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে ৯ জেব্রার মৃত্যু, নেপথ্যে মারামারি ও শ্বাসকষ্ট

এসব বিষয়ে সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সহকারী বন সংরক্ষক তবিবুর রহমান বলেন, নিয়মিত খাবার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রাণীদের দেওয়া হয়। নিয়মিত শারীরিক পরীক্ষাও করা হয়। কোনও প্রাণী অসুস্থ হয়ে পড়লে পার্কের প্রাণী চিকিৎসক তাৎক্ষণিক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। সম্প্রতি ৯টি জেব্রা মারা যাওয়ার ঘটনায় বিশেষজ্ঞ কমিটির সদস্যরা ১০ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। ইতোমধ্যে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। কোর সাফারির পানির লেক থেকে পানি সেচে ফেলে দিয়ে নতুন পানি দেওয়া হচ্ছে। কিছু প্রাণীদের ভ্যাকসিন ও কৃমিনাশক ওষুধসহ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, গত ২ জানুয়ারি থেকে ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ৯টি জেব্রা মারা যায়। ওই ঘটনায় গঠিত বিশেষজ্ঞ বিশেষ মেডিক্যাল বোর্ড মারামারি করে চারটি এবং অন্যান্য পাঁচটি জেব্রা ইনফেকশনাল ডিজিজে মারা গেছে বলে জানায়। ওই ঘটনায় বন পরিবেশ ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।