দিনের পর দিন কাটে ট্রাকের ছোট্ট কেবিনে

দিনের পর দিন কেটে যায় ট্রাকের ছোট্ট কেবিনে। ঠিকমতো খাওয়া নেই, গোসল-টয়লেটে যে বিড়ম্বনা ও ভোগান্তি তাতে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। মহাসড়কই এখন আমাদের ঠিকানা।  আমাদের কাছে দৌলতদিয়া ঘাট এখন ভোগান্তির অপর নাম। মনে পড়ে না, কখন যে ভোগান্তি ছাড়া এ ঘাট পার হয়েছি। এভাবেই আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন যশোর ঝিকরগাছা থেকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে আসা গাজীপুরগামী ট্রাকের চালক হাসেম শেখ (৪৫)।

বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের জমিদার ব্রিজ পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার এলাকায় দুই সারিতে পারের অপেক্ষায় আটকে আছে কয়েকশ’ যাত্রীবাহী বাস, পণ্যবাহী ট্রাকসহ ছোট যানবাহন। এছাড়া ঘাট এলাকায় যানজট কমাতে ঘাট থেকে সাড়ে ১৩ কিলোমিটার পেছনে গোয়ালন্দ মোড়ে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চালিক মহাসড়কে অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাকগুলোকে আটকে দিয়েছে পুলিশ। এতে করে প্রায় আরও চার কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পণ্যবাহী ট্রাকের সিরিয়াল তৈরি হয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌ-পথের দৌলতদিয়া ঘাট পার হতে ভোগান্তি বাড়ছে। একদিকে নদী পার হতে দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় দীর্ঘ সময় সিরিয়ালে অপেক্ষা করতে হয়। অপরদিকে সড়কে শৃঙ্খলা না থাকায় পাটুরিয়া থেকে ফেরিতে নদী পার হয়ে এসেও দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় যানজটের কারণে গন্তব্যে পৌঁছাতে দীর্ঘ সময় লাগছে। এর ওপর বাড়তি যোগ হয়েছে নাব্য সংকট, ঘাট ও ফেরি সংকট। সব মিলিয়ে ভোগান্তির অপর নাম এখন দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথ।

বিআইডব্লিটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বর্তমান ২০টি ফেরির মধ্যে ১৭টি ফেরি দিয়ে যানবাহন পারাপার করা হচ্ছে। বাকি তিনটি রোরো (বড়) ফেরি পাটুরিয়ার ডক ইয়ার্ডে মেরামতে রয়েছে। অন্যদিকে দৌলতদিয়া প্রান্তে সাতটি ঘাটের মধ্যে চারটি ঘাট সচল রয়েছে। তিনটি ঘাট দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। ঘাট বন্ধ, ফেরি সংকট এবং নাব্যতা সংকট থাকায় ব্যস্ততম এ নৌরুটে যানবাহন পারাপার ব্যহত হচ্ছে। যে কারণে প্রতিনিয়ত দৌলতদিয়া ঘাট অভিমুখে নদী পারের অপেক্ষায় যানবাহনগুলোকে দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে। 

এছাড়া পাটুরিয়া ঘাট থেকে নদী পার হয়ে দৌলতদিয়া ঘাটে নামার পরও যানবাহনগুলোকে চরম যানজটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। দৌলতদিয়া ঘাটগামী যানবাহনগুলো দ্রুত ফেরির নাগাল পেতে সিরিয়াল ভেঙে এলেমেলোভাবে অগ্রসর হওয়ায় অনেক সময় পুরো মহাসড়ক আটকে যাচ্ছে। এতে নদী পার হয়ে আসা যানবাহনগুলোও ঘণ্টার পর ঘণ্টা খোলা আকাশের নিচে যানজটে আটকে থাকছে।

ফরিদপুর থেকে আসা ঢাকাগামী গোল্ডেন পরিবহনের যাত্রী গার্মেন্ট কর্মী সুমি আক্তার বলেন, দু’দিনের জন্য ছুটি নিয়ে বাড়ি এসেছিলাম। বাড়ি যাওয়ার দিনও দীর্ঘ যানজটে ছিলাম, এমনকি ঢাকায় ফেরার পথেও বাসের মধ্যে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা ধরে বসে আছি। তীব্র গরমে ভোগান্তির মধ্যে আর ভালো লাগছে না। সঙ্গে কিছু ব্যাগ থাকার কারণে বাস থেকে নেমেও যেতে পারছি না। পথেই মনে হয় দিন কেটে যাবে।

ঢাকাগামী কাভার্ডভ্যান চালক আ. জব্বার শেখ বলেন, দৌলতদিয়া ঘাটে সারা বছরই দুর্ভোগ লেগে থাকে। কখনও ফেরি সংকট, কখনও নাব্য সংকট, আবার কখনও ঘন কুয়াশায় ফেরি চলাচল ব্যাহত হয়। এভাবে সারা বছর একটার পর একটা সমস্যা লেগেই থাকে। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুর্ভোগ সহ্য করে নদী পার হতে হয়। তিনি আরও বলেন, যানজটের কারণে আমার মতো হাজারো চালকের গুরত্বপূর্ণ সময় দৌলতদিয়া ঘাটে বসে থেকে নষ্ট হয়। দক্ষিণ-পশ্চিঞ্চলের মানুষের কথা চিন্তা করে কর্তৃপক্ষের উচিত এ রুটে ফেরি বৃদ্ধি করা।

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া ঘাট কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. শিহাব উদ্দিন বলেন, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে বর্তমানে ২০টি ফেরির মধ্যে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। বাকি তিনটি রো রো (বড়) ফেরি মেরামত করা হচ্ছে। এছাড়া পদ্মার পানি কমে যাওয়ায় ফেরিতে লোড আনলোডে দ্বিগুণ সময় লাগছে। যে কারণে গত কয়েকদিন ধরে ফেরি চলাচল কিছুটা ব্যহত হচ্ছে। তাছাড়া শিমুলিয়া নৌ-পথের অধিকাংশ গাড়িই এ ঘাট দিয়ে পার হওয়ার কারণে চাপ বেড়েছে বলে জানান তিনি।