‘৭২ ঘণ্টায়ও ফেরির দেখা নেই, স্টিয়ারিং ধরে বসে আছি’

‘তিন দিন ধরে ঘাট এলাকাতে আটকে আছি। ঠিকমতো ঘুমানো তো দূরের কথা খেতেও পারি না। সব সময় গাড়ির স্টিয়ারিং ধরে বসে থাকতে হয়। কিছুক্ষণ পর একটু একটু করে টানি। বসে থাকতে থাকতে ক্লান্ত হয়ে গেছি। রাতভর জেগে থাকায় চোখে প্রচুর ঘুম। কিন্ত কী করবো, গাড়ি তো চালাতে হবেই।’ 

কথাগুলো বলছিলেন খুলনা থেকে মুরগির খাবার নিয়ে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে আসা কাভার্ডভ্যানচালক আনিছুর রহমান। সোমবার (২৮ মার্চ) বেলা ১১টায় দৌলতদিয়া ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় তিনি এসব কথা জানান।

আনিছুর বলেন, ‘খুলনা থেকে শনিবার সকালে ছেড়ে এসে গোয়ালন্দ মোড়ে বিকালে পৌঁছালে পুলিশ গাড়ি আটকে ট্রাকের সিরিয়ালে রাখে। সেখানে দুই দিন থাকার পর গতকাল রাত ১২টার দিকে এসে আবারও ঘাটে সিরিয়ালে রয়েছি। জানি না এখান থেকে কখন মুক্তি পাবো।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট সূত্রে জানা গেছে, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া রুটে ১১টি রো রো (বড়), ছয়টি ইউটিলিটি (ছোট), একটি কে-টাইপ এবং দুইটি ডাম্প (টানা) ফেরি রয়েছে। এর মধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বিকাল হলে দুটি ফেরি পাটুরিয়া মধুমতি ডকইয়ার্ডে মেরামতে পাঠানো হয় এবং একটি বড় ফেরি মাওয়া ঘাটে পাঠানো হয়েছে। 

যানজটে থাকা অধিকাংশ গাড়ির চালক ও সহকারী ক্লান্ত। অনেকে ট্রাকের নিচে কাপড় বিছিয়ে ঘুমিয়ে আছেন

গত ২৪ ঘণ্টায় দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ফেরিগুলো ২২১টি ট্রিপে বিভিন্ন যানবাহন নিয়ে পাটুরিয়া গেছে। যার মধ্যে যাত্রীবাহী বাস রয়েছে ৬০২টি, ট্রাক এক হাজার ১৭২টি, ছোট যানবাহন দুই হাজার ৬৬টি। সব মিলিয়ে তিন হাজার ৮৪০টি যানবাহন দৌলতদিয়া ফেরিঘাট থেকে পার হয়ে পাটুরিয়া ঘাটে পৌঁছায়।

সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে দেখা যায়, ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে গোয়ালন্দ পদ্মার মোড় পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার পণ্যবাহী ট্রাকের সারি। এর মধ্যে এক কিলোমিটার যাত্রীবাহী বাস রয়েছে। যানজটে থাকা অধিকাংশ গাড়ির চালক ও সহকারীদের চোখে ঘুম। কেউবা ট্রাকের নিচে কাপড় বিছিয়ে ঘুমিয়ে আছেন।

বরিশাল থেকে আসা মাওনাগামী ট্রাকচালক ইসলাম বলেন, ‘শনিবার দুপুরে গোয়ালন্দ মোড়ে এসে আটকে ছিলাম। আড়াই দিন পর আজ ভোরে ঘাটে এসে সিরিয়ালে আছি। কিন্ত যে পরিমাণ সিরিয়াল দেখছি, মনে হয় না আজ ফেরি পার হতে পারবো।’

নিয়মিত ভোগান্তি পোহাতে হয় দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে আসা যানবাহনের চালক ও যাত্রীদের

যশোর থেকে আসা রয়েল পরিবহনের চালক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ঘাটে এত যানজটের কারণ অব্যবস্থাপনা। তীব্র গরমে ও রোদে যাত্রীরা হাঁপিয়ে উঠছে। তারপর আবার ফেরি কম এবং ঘাট স্বল্পতা। ফেরি বেশি থাকলে যানজট কম হতো।’

বিআইডব্লিউটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শিহাব উদ্দিন বলেন, নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় ঘাট খাড়া হয়ে লোড-আনলোডে বেশি সময় লাগছে। পাশাপাশি গত বুধবার থেকে দুটি ফেরির যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছে। একটি বড় ফেরি মাওয়া ঘাটে যাওয়ায় ফেরির সংখ্যাও কমে গেছে। তারপর আবার অতিরিক্ত গাড়ির চাপ। বিকালের মধ্যে গাড়ির চাপ কমে আসবে। বর্তমানে এ নৌপথে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে।