পাঁচ গ্রামের মানুষের সংঘর্ষে আহত ২০

ফরিদপুরের সালথায় আধিপত্যকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। ভাঙচুর করা হয়েছে ১৭টি বসতঘর। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সোমবার (১১ এপ্রিল) রাতে উপজেলার আটঘর ইউনিয়নে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে পাঁচ গ্রামের দেড় হাজার মানুষ জড়িয়ে পড়েন। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে শর্টগানের গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

আটঘর ইউনিয়নের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইউনিয়নে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বর্তমান ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম খান সোহাগের সঙ্গে গত ইউপি নির্বাচনে পরাজিত স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মো. বকুল মাতবরের সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলেছে।

প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন জানান, সোমবার সন্ধ্যায় ইফতার শেষে আটঘর ইউপি চেয়ারম্যান সোহাগের অনুসারী খোয়াড় গ্রামের জালাল শেখ ও রবিউল শেখের সঙ্গে বকুল মাতবরের অনুসারী আমিনুল মাতবরের সমর্থক খবির শেখের বাগবিতণ্ডা হয়। বিষয়টি নিয়ে উভয় গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে জানাজানি হলে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে উভয় গ্রুপের সমর্থকরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র হাতে জড়ো হয়ে একে অপরের ওপর হামলা চালালে সংঘর্ষ শুরু হয়।

সংঘর্ষে সেনাটি, গোবিন্দপুর, সিংহপ্রতাপ, গোয়ালপাড়া ও বালিয়া গ্রামের দেড় সহস্রাধিক মানুষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে অংশ নেন। এসব গ্রামের লোকজন খোয়াড় গ্রামের সঙ্গে জোট বেঁধে গ্রাম্য দল করেন বলে জানা গেছে। এতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নেয়।

সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দফায় দফায় চলে ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া, সংঘর্ষ ও বাড়িঘর ভাঙচুর। পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে গুলি, কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

সংঘর্ষে রাজিব মোল্লা, ইস্রাফিল শেখ, বজলু মাতবর, ফিরোজ মাতবর, আহম্মদ মাতবর ও জালাল শেখসহ উভয় গ্রুপের অন্তত ২০ জন আহত হন। আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বকুল মাতবরের সমর্থক আমিনুল মাতবর দাবি করেন, ‘সামান্য ঘটনা নিয়ে সামাদ মাতবর তার দল নেতা ইউপি চেয়ারম্যান সোহাগকে বলে গোয়ালপাড়া, সেনাটি, গোবিন্দপুর ও সিংহপ্রতাপ থেকে শত শত লোক এনে আমার লোকজনের ওপর হামলা চালায়। আমার দলের নিজাম শেখের তিনটি ও সত্তার মাতবরের দুইটি বসতঘর ভাঙচুর করে। পরে আমার লোকজন প্রতিরোধ গড়ে তুললে সংঘর্ষ শুরু হয়।’

ইউপি চেয়ারম্যান সোহাগের সমর্থক সামাদ মাতবর বলেন, ‘গ্রাম্য দলপক্ষ নিয়ে বাগবিতণ্ডার জেরে আমিনুল মাতবর বালিয়া গ্রাম থেকে অনেক লোকজন এনে আমার লোকজনের ওপর হামলা করে। এর ফলে মোহাম্মাদ ফকিরের দুইটি, কুদ্দুস মাতবরের তিনটি, মানিক মাতবরের তিনটি, জালাল শেখে দুইটি ও শুকুর মশালচীর দুইটি বসতঘর ভাঙচুর করে তারা।’

সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা-সালথা সার্কেল) মো. সুমিনুর রহমান বলেন, ‘দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। থানা ও জেলা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে শর্টগানের ১৫টি গুলি ও দুটি সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এলাকার পরিবেশ এখন শান্ত। তবে ফের সংঘর্ষের আশঙ্কায় ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’