রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ইন্ধনেই শিশু আল রাফসানকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রাফসানের বাবা ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলার ঢেউখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বয়াতি এ অভিযোগ করেছেন। বুধবার (১৮ মে) বিকালে সদরপুর উপজেলা সদরে ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে ঢুকে শিশু রাফসানকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। একইসঙ্গে কুপিয়ে আহত করা হয় ওই ইউপি চেয়ারম্যানের স্ত্রী দিলজাহান বেগম রত্নাকে (৩৫)। তিনি ঢাকার নিউরো সায়েন্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।
এদিকে ওইদিন সন্ধ্যায় অভিযুক্ত এরশাদ মোল্যা আটরশি টিঅ্যান্ডটি টাওয়ারের ওপর থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
চেয়ারম্যানের ছেলেকে কুপিয়ে হত্যার পর যুবকের ‘আত্মহত্যা’নিহত আল রাফসান স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের দুই ছেলের মধ্যে রাফসান ছোট। বড় ছেলে রায়হান নবম শ্রেণিতে পড়ালেখা করে।
মিজানুর আরও বলেন, ‘সালিশ বৈঠকের বিষয় নিয়ে এরশাদ আমার প্রতি ক্ষুব্ধ ছিল না। সে আমাকে আব্বা বলে ডাকতো। রাজনৈতিকভাবে একটি মহল দীর্ঘদিন ধরে আমার বিরোধিতা করে আসছিল। কিছুদিন আগেও আমাকে মোবাইলফোনে হুমকি দেওয়া হয়। আমার বিশ্বাস তারাই এরশাদকে দিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।’
এদিকে বৃহস্পতিবার (১৯ মে) দুপুর আড়াইটার দিকে শিশু রাফসানের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে সদরপুরে আনা হয়। সদরপুর উপজেলা সদরের পোস্ট অফিস সংলগ্ন ইউপি চেয়ারম্যানের বাসায় গোসল শেষে সদরপুর উপজেলা স্টেডিয়ামে বিকাল সাড়ে ৩টায় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। শিশু রাফসানকে বিদায় জানাতে হাজারো মানুষের ঢল নামে।
জানাজায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ, ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য মুজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী, জেলা প্রশাসক অতুল সরকার, ফরিদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. কবিরুল ইসলাম সিদ্দিকী, সদরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আহসান মাহমুদ রাসেল, থানার ওসি সুব্রত গোলদার, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি, আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও নানা শ্রেণি পেশার হাজারো মানুষ অংশ নেন।
পরে ঢেউখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বয়াতির গ্রামের বাড়ি চর ডুবাইলে বাড়ির আঙ্গিনায় সাড়ে ৪টায় দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে নিজ বাড়ির আঙিনায় দাদির কবরের পাশে শিশু রাফসানকে সমাহিত করা হয়। এর আগে শিশু রাফসানের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছালে হাজারো নারী-পুরুষ কান্নায় ভেঙে পড়েন। তাদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে।
অপরদিকে সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন ছিলেন এলশাদের স্ত্রী রাহিনুর বেগম। তবে বৃহস্পতিবার সেখানে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।
সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ওমর ফয়সাল বলেন, কয়েকদিন আগে রাহিনুর বেগমকে মারপিট করে তার স্বামী এরশাদ মোল্যা। শরীরের বিভিন্ন স্থানে তিনি আঘাত পান। হত্যাকাণ্ডের পর বৃহস্পতিবার কাউকে কিছু না জানিয়ে তিনি হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যান।
সদরপুর থানার ওসি সুব্রত গোলদার বলেন, শিশু রাফসানের মরদেহের ময়নাতদন্ত শেষে সদরপুরে আনা হয়। জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।