প্রসূতির মৃত্যু: হাসপাতালের লাইসেন্স নেই, ডাক্তারের ডিগ্রি নেই

মানিকগঞ্জের সিংগাইরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারে সাবিনা আক্তার (২০) নামে এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় সোমবার (২৩ মে) পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল কর্মকর্তা ডা. ফারহানা নবিকে প্রধান করে এই কমিটি করা হয়। রবিবার (২২ মে) ভোরে পৌর এলাকার ভাষা শহিদ রফিক সড়কে অবস্থিত সিটি হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল অস্ত্রোপচারের পর তার মৃত্যু হয় বলে দাবি করেন স্বজনরা।

প্রাথমিক তদন্তে কমিটি জানতে পেরেছে, সরকারি কাগজে ওই হাসপাতালের কোনও অস্তিত্ব নেই। এ ছাড়া অস্ত্রোপচারকারী ইমা বিনতে ইউনুছ ডিগ্রিধারী চিকিৎসক নন।

জানা গেছে, মৃত প্রসূতি উপজেলার সায়েস্তা ইউনিয়নের টাকিমারা গ্রামের মুখলেছ মিয়ার স্ত্রী ও জয়মন্টপ ইউনিয়নের উত্তর বাহাদিয়া গ্রামের সকেল উদ্দিনের মেয়ে। সাবিনার প্রসব ব্যথা উঠলে শনিবার রাত ১১টার দিকে তাকে ওই বেসরকারি হাসপাতালে নেওয়া হয়। রাত ৩টার দিকে চিকিৎসক ডা. ইমা বিনতে ইউনুছকে ডেকে এনে তার অস্ত্রোপচার করানো হয়। তিনি একটি মেয়ে সন্তান জন্ম দেন। অস্ত্রোপচারের পরই তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। সে সময় পরিবার দাবি তোলে, ভুল অস্ত্রোপচারের কারণে অধিক রক্তক্ষরণে অপারেশন থিয়েটারেই তার মৃত্যু হয়। পরে অ্যাম্বুলেন্স ডেকে মৃত অবস্থায় সাবিনাকে ঢাকায় রেফার্ড করা হয়।

এদিকে, ঘটনার পর বিষয়টি মীমাংসার জন্য জোর তৎপরতা শুরু করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে প্রসূতির স্বজন ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের মধ্যে দফায় দফায় দেনদরবার হয়। একপর্যায়ে দুই লাখ টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মীমাংসা হয়। কিন্তু প্রসূতির মা-বাবা ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের মধ্যে টাকা ভাগাভাগি নিয়ে ঝামেলা বাধে। এই কারণে সমঝোতার বিষয়টি এখনও ঝুলে আছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক স্বজন বলেন, ‘প্রভাবশালী মহলের চাপে আপস-মীমাংসায় রাজি হয়েছিলাম। কিন্তু এখনও জরিমানার পুরো টাকা পরিশোধ করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।’

উপজেলা পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. নুজহাত নওরীন আমীন বলেন, ‘ঘটনার প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে। ঘটনার সত্যতা পেলে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব ডা. ফারহানা নবি বলেন, ‘তদন্তের কাজ শুরু করেছি। প্রাথমিক তদন্তকালে সিটি হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক নজরুল ইসলাম স্বপনের কাছে তার প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র দেখতে চেয়েছিলাম- তিনি তা দেখাতে পারেননি। সরকারি কাগজে সিংগাইরে সিটি হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামে কোনও হাসপাতাল নেই। যিনি প্রসূতির অস্ত্রোপচার করেছেন তিনি কোনও ডিগ্রিধারী চিকিৎসক নন। এমনকি যে অজ্ঞান করেছেন তারও কোনও ডিগ্রি নেই।’