যমুনা এক্সপ্রেসের সংরক্ষিত টিকিট পায় কারা?

গাজীপুরের শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশনে ঢাকাগামী যমুনা এক্সপ্রেসের ১০টি আসনের মধ্যে তিনটির টিকিট পান না যাত্রীরা। প্রতিদিন ওই তিনটি আসন সংরক্ষণ করা হয়। সংরক্ষিত টিকিট কোথায়, কার কাছে, কী উপায়ে বিক্রি করা হয়, তারও কোনও হদিস মিলছে না।

নিয়মিত ট্রেনে ভ্রমণ করা যাত্রীরা জানান, ভোর ৬টায় শ্রীপুর স্টেশনে ট্রেনটির যাত্রাবিরতি রয়েছে। এক ঘণ্টা আগে থেকেই টিকিট বিক্রি শুরু হয়। কাঙ্ক্ষিত আসনের টিকিট পেতে যাত্রীরা ভোর সাড়ে ৪টায় স্টেশনে উপস্থিত হয়ে কাউন্টারের সামনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন। লাইনে দাঁড়ানো প্রথম সাত যাত্রীর কাছে আসনের বিপরীতে টিকিট বিক্রি করা হয়। বাকিরা পান না। শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবং শ্রীপুর থানা পুলিশের কথা বলে ওই তিনটি টিকিট প্রতিদিন সংরক্ষণ করা হয়। আবার কখনও কখনও নিজেদের আত্মীয়-স্বজনের কথা বলেও যাত্রীদের কাছে টিকিটি বিক্রি বন্ধ রাখা হয়। এটি শ্রীপুর রেলওয়ে স্টেশেনের প্রতিদিনের চিত্র।

ইউএনও এবং থানা পুলিশের কথা বলে ওই তিনটি টিকিট উচ্চমূল্যে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তির কাছে নিয়মিত বিক্রি করা হয় বলেও অভিযোগ করেন যাত্রীরা। যাত্রীদের অভিযোগ, এর সঙ্গে একজন সহকারী স্টেশন মাস্টার এবং একজন পয়েন্টসম্যান জড়িত রয়েছেন।

এ বিষয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘শ্রীপুরে দায়িত্বে থাকা অবস্থায় গত ১০ মাসে পাঁচ থেকে ছয় দিন টিকিট কিনেছি। তাও আবার স্বজনদের যাতায়াতের জন্য। টিকিটের প্রয়োজন হলে আগে থেকেই বলে রাখা হয়। অন্যান্য সময় টিকিট কারা পায় জানি না।’

শ্রীপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, ‘শ্রীপুর থানা পুলিশের কথা বলে প্রতিদিন ট্রেনের টিকিট সংরক্ষণ করে রাখার বিষয়টি রেলওয়ে কর্মকর্তাদের মনগড়া কথা। তাছাড়া যেকোনো যাত্রীর টিকিট পাওয়ার অধিকার রয়েছে। তারা কাদের টিকিট দিচ্ছে তারাই ভালো জানেন।’

যাত্রীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার (২০ মে) ভোর ৫টায় স্টেশনে গিয়ে একই চিত্র দেখতে পান স্থানীয় সংবাদকর্মীরা। সেদিন ভোর সাড়ে ৪টা থেকে লাইনে দাঁড়ানো প্রথম সাত জনের কাছে আসনের বিপরীতে টিকিট বিক্রির পর ইউএনও এবং থানার ওসির কথা বলে আসনের বিপরীতে তিনটি টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়। 

এ বিষয়ে লিখিত নির্দেশনা আছে কিনা জানতে চাইলে টিকিট বিক্রয়কারী ও সহকারী স্টেশন মাস্টার সাইদুর রহমান জানান, তাদের আত্মীয়-স্বজনের জন্য ওই তিনটি টিকিট রাখা হয়। কাঙ্ক্ষিত লোকজন না থাকলে কার কাছে, কী উপায়ে টিকিটগুলো বিক্রি করা হয়, জানতে চাইলে তিনি উত্তর দেননি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (পূর্ব) মোহাম্মদ নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘এমন ঘটনার কোনও নির্দেশনা আমাদের এখান থেকে দেওয়া হয়নি। টিকিট থাকা সাপেক্ষে প্রাপ্তির অধিকার সব যাত্রীর রয়েছে। যিনি আগে আসবেন তিনি আগে পাবেন। স্থানীয় প্রশাসন যদি বলে থাকে সেক্ষেত্রে যাত্রীর প্রতি সম্মান দেখানোর জন্য রাখতে পারেন, তবে প্রতিদিনের জন্য নয়। বিষয়টি নিয়ে স্টেশন মাস্টারের সঙ্গে কথা বলবো।’