ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু: সেই হাসপাতাল সিলগালা

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় অনুমোদনহীন হাসপাতালটি সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৬ মে) সন্ধ্যায় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটি ভূঞাপুর বাজারস্থ ‘মা ক্লিনিক অ্যান্ড হাসপাতাল’ পরিদর্শন শেষে সিলগালা করে দেন। 

এর আগে বুধবার (২৫ মে) রাতে সিজারিয়ান অপারেশনের সময় ভুল চিকিৎসায় লাইলি বেগম (৩০) নামের এক প্রসূতিসহ নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মৃত প্রসূতির পরিবারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে। মৃত লাইলি বেগম উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের খানুরবাড়ি গ্রামের আতোয়ার হোসেনের স্ত্রী।

আরও পড়ুন: ভুল চিকিৎসায় প্রসূতিসহ নবজাতকের মৃত্যু, পালালেন চিকিৎসক-নার্স

প্রতিষ্ঠানটি সিলগালা করার সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান, তদন্ত কমিটির প্রধান ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শিশু কনসালট্যান্ট ডা. অনামিকা সাহা, মেডিক্যাল অফিসার ডা. নিশাত সাঈদা ও ডা. খাদেমুল ইসলাম।

আব্দুস সোবহান বলেন, ‘সিজারিয়ান অপারেশনের সময় রোগীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত কমিটি হাসপাতাল পরিদর্শন করে সিলগালা করে দিয়েছে। যাতে সেখানে কার্যক্রম চালাতে না পারে কর্তৃপক্ষ। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত চলছে।’

ভূঞাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘ওই নারীর লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।’  

প্রসঙ্গত, বুধবার রাতে লাইলি বেগমের প্রসবব্যথা শুরু হলে স্বজনরা ভূঞাপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্মরত চিকিৎসক রোগীকে টাঙ্গাইলে পাঠান। সেখানে থাকা ক্লিনিকের দালাল শামছুর খপ্পরে পড়েন রোগীর স্বজনরা। দালালের কথামতো পরে প্রসূতিকে মা ক্লিনিক অ্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর তাকে ক্লিনিকের অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যান চিকিৎসক ও নার্সরা। ক্লিনিকের সার্জারি চিকিৎসক ও ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) এনামুল হক সোহেল ও অ্যানেসথেসিয়ার চিকিৎসক আল মামুন অস্ত্রোপচার শুরু করেন। একপর্যায়ে রোগীর মৃত্যু হয়। পরে ঘটনা ধামাচাপা দিতে স্বজনদের না জানিয়ে লাশ অ্যাম্বুলেন্সে উঠিয়ে টাঙ্গাইলে পাঠিয়ে দেওয়ার সময় স্বজন ও স্থানীয়রা বাধা দেন। 

আরও পড়ুন: অস্ত্রোপচার টেবিলে প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যু, তদন্ত কমিটি গঠন

জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল ফজল মো. সাহাবুদ্দিন খান বলেন, ‘ঘটনা তদন্তে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি কনসালট্যান্ট ডা. ফারহানা পারভীনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। এছাড়া ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’