কারাগার থেকে বেরিয়ে দেখতে হলো মাসহ ৫ জনের লাশ

মারামারির মামলায় ৯ মাস ধরে কারাগারে রাজবাড়ীর পাংশা উপজেলার পাট্টা ইউনিয়নের পুইজোর গ্রামের মছিরন নেছার ছেলে ইসলাম মণ্ডল। বুধবার (১ জুন) জেলা আদালতে ছেলের শুনানি। ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে ইজিবাইকে আদালতের দিকেই যাচ্ছিলেন মা মছিরন। তবে যাওয়া আর হলো না। রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কের কালুখালীর চাঁদপুর এলাকায় বিপরীত দিকে থেকে আসা একটি দ্রুতগতির ট্রাক ইজিবাইকটিকে চাপা দেয়। এতে একই পরিবারের পাঁচ জনসহ ছয় জন প্রাণ হারান। এরমধ্যে মছিরনসহ তার পরিবারেরই পাঁচ জন। অন্যজন ইজিবাইক চালক।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুনানিতে মছিরনের ছেলে ইসলাম মণ্ডলের জামিন হয়েছে। রাতে কারাগার থেকেও বেরিয়েছেন। তবে কারাগার থেকে বের হয়ে তাকে দেখতে হবে পারিবারের পাঁচ জনের লাশ। দাফন করতে হবে তাদের।

জানা গেছে, ট্রাক ইজিবাইকটিকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলে তিন জন এবং কালুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরও তিন জন প্রাণ হারান। অটোরিকশায় থাকা মছিরনের মেয়ে মর্জিনা বেগম ও ছেলে আহমদ শেখ গুরুতর আহত হন। তাদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। তবে অবস্থার অবনতি হলে বিকালে মর্জিনা বেগমকে ঢাকায় পাঠানো হয়।

দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন, পাংশা উপজেলার পাট্টা ইউনিয়নের মুছিদাহ বনগ্রামের বছির উদ্দিনের ছেলে (ইজিবাইক চালক) নাসির উদ্দিন মিয়া (৩৫), একই গ্রামের গ্রামের মোতালেব শেখের স্ত্রী মছিরন নেছা (৬০), তার মেয়ে মরিয়ম বেগম (৪০) এবং তিন নাতি-নাতনি নয়ন (৯), ইউসুফ (৮) ও শিলা (২০)।

মছিরন নেছার বড় ভাই মো. আক্কাস আলী জানান, তার ভাগ্নে ইসলাম মণ্ডল একটি মারামারি মামলায় ৯ মাস রাজবাড়ী জেলা কারাগারে আছে। বুধবার সকালে পাংশা উপজেলার পাট্টা ইউনিয়ন থেকে একটি অটোরিকশা ভাড়া করে তার বোন মছিরন পরিবারের সদস্যরা নিয়ে ছেলের জামিন শুনানির জন্য আদালতে যাচ্ছিলেন। কিন্তু কালুখালীর চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিপরীত দিক থেকে আসা ট্রাকের চাপায় পরিবারের পাঁচ জন প্রাণ হারান। শুধু বেঁচে যান মছিরনের মেয়ে মর্জিনা ইসলাম ও ছেলে আহমদ। তবে মর্জিনার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

তিনি আরও বলেন, আজ দুপুরে রাজবাড়ীর আদালত ইসলাম মণ্ডলকে জামিন দিয়েছেন। কিন্তু কারাগার থেকে বের হয়ে মা-সহ স্বজনের পাঁচটি লাশ দাফন করতে হবে তাকে।

প্রাইভেটকার চালক রবিউল ও যাত্রী সঞ্জু সরকার জানান, তারা ব্যক্তিগত গাড়িতে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকার দিকে যাচ্ছিলেন। কালুখালীর ওই এলাকায় তারা ইজিবাইকের পেছনে ছিলেন। বিপরীত দিক থেকে একটি দ্রুতগতির ট্রাক আসে। ইজিবাইক ট্রাকটিকে সাইড দেয়। কিন্তু ট্রাকটি ইজিবাইককে সাজোরে ধাক্কা দিলে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। পরে তাদের প্রাইভেটকারের সামনের অংশ ট্রাকের নিচে চাপা পড়ে। 

প্রাণে বেঁচে যাওয়া ইজিবাইকের যাত্রী শাহিন আহমেদ জানান, তারা রাজবাড়ী আদালতে যাচ্ছিলেন। ঘাতক ট্রাকের বেপরোয়া গতি দেখে দুর্ঘটনার আগেই লাফ দিয়ে নিজেকে রক্ষা করে। না হলে তিনিও লাশ হতেন বলে জানান।

রাজবাড়ী ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক আব্দুর রহমান বলেন, ‘সকাল ৯টার দিকে কালুখালী ফায়ার সার্ভিসের সামনে ট্রাক, অটোরিকশা ও প্রাইভেটকারের সংঘর্ষের খবর শোনামাত্রই ঘটনাস্থলে গিয়ে তিন জনের লাশ উদ্ধার করি। গুরুতর আহত অবস্থায় চার জনকে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে পাঠালে সেখানে আরও তিন জন মারা যান।’

কালুখালী থানার ওসি মো. নাজমুল হাসান বলেন, ‘দুর্ঘটনাস্থলেই তিন জন নিহত হয়েছেন। হাসপাতালে আরও তিন জন মারা গেছেন। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ট্রাকটি জব্দ করা হয়েছে। তবে ট্রাকের চালক ও সহকারী পালিয়ে গেছেন। লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।’