সহকর্মীর সঙ্গে প্রেম করায় কারখানায় মারধর, প্রাণ দিলেন শ্রমিক

সহকর্মীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ানোয় গাজীপুরের শ্রীপুরে কারখানা মহাব্যবস্থাপক মারধর করায় রমজান হোসেন (২৫) নামে এক শ্রমিক আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার (৭ জুন) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ওই শ্রমিকের ভাড়া বাসায় এ ঘটনা ঘটে। শ্রীপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান আত্মহত্যা ও লাশ উদ্ধারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

রমজান দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের আনসারুল ইসলামের ছেলে। স্ত্রী ও বাবা-মাকে নিয়ে শ্রীপুর উপজেলার রাজাবাড়ী ইউনিয়নের গজারিয়া গ্রামে আমান উল্লাহর বাড়িতে ভাড়া থেকে স্থানীয় রিলাক্স ফ্যাশনের ফিনিশিং সেকশনে হেলপার পদে চাকরি করতেন তিনি। তার বাবা-মা ও স্ত্রীও ওই কারখানায় চাকরি করেন।

মা আকলিমা বেগম অভিযোগ করেন, তার ছেলে কারখানার এক অপারেটরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে যায়। বিষয়টি জানতে পেরে সোমবার কারখানার মহাব্যবস্থাপক (উৎপাদন) ছগির হোসেন তাকে অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে যান। এ সময় ফিনিশিং সেকশনের ৪-৫ জন অপারেটর তার অফিস কক্ষে ছিল। পরে সেখানে তাকে মারধর করা হয়।

তিনি দাবি করেন, ‘ঘটনা শুনে তার কক্ষে গিয়ে দেখি, ওনার সঙ্গে উপস্থিত ফিনিশিং সেকশনের অন্য অপারেটররা রমজানকে মারধর করছে। পরে আমি জিএম স্যারের হাতে-পায়ে ধরে ছেলেকে মারধর না করতে বলি। এরপর ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসি। মঙ্গলবার সে অফিসে যায়নি। সারা দিন বাসায় ছিল। জিএম ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন। সেই টাকা পরিশোধ না করলে রমজানের বেতন থেকে কেটে রাখা হবে বলে জানিয়ে দেন।’

নিহতের দাদি আছিয়া খাতুন জানান, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় রমজান তার ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। কিছুক্ষণ তার কোনও সাড়াশব্দ না পেয়ে জানালায় উঁকি দিলে দেখা যায় সে ঝুলে আছে। পরে ইলেকট্রিক শক খেয়ে ঝুলে আছে ধারণা করে বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে দেওয়া হয়। খবর পেয়ে তার বড় ভাই এসে দেখে রমজান আড়ার সঙ্গে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ঝুলে আছে। পরে রাতেই গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

অভিযুক্ত ছগির হোসেন দাবি করেন, ‘কারখানায় মারধরের কোনও নিয়ম নেই। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, তা সঠিক নয়। কারখানায় মারধরের কোনও ঘটনা ঘটেনি। বুধবার সকাল ৮টায় জানতে পেরেছি রমজান আত্মহত্যা করেছে।’ 

শ্রীপুর থানার এসআই রিপন খান জানান, বুধবার রমজানের ঘর থেকে ডায়েরি উদ্ধার করা হয়েছে। তাতে কারখানার মহাব্যবস্থাপকের সহযোগিতায় হারুনসহ চার জন তাকে মারধর করেছে বলে লেখা রয়েছে। তার দুই সন্তান ও স্ত্রীকে দেখে রাখার জন্য বড় ভাইকে অনুরোধ করেছে। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রাখা হয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।