মিনিটেই বিলীন ২ কোটি টাকার বিদ্যালয় ভবন

পদ্মা নদীর অব্যাহত ভাঙনে মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার চরাঞ্চলের একমাত্র বিদ্যাপীঠ আজিমনগর উচ্চ বিদ্যালয়টি মিনিটের মধ্যেই বিলীন হয়ে গেছে নদীগর্ভে। মঙ্গলবার (২১ জুন) দুপুর সোয়া ১টার দিকে পুরো ভবনটি পদ্মার গর্ভে চলে যায়। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চৌধুরী আওলাদ হোসেন বিপ্লব এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নিগার সুলতানা চৌধুরী, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের সহকারী প্রকৌশলী মো. সবুজ হোসেন জানান, বিদ্যালয়ের চার তলা ভবনের একতলা সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। একবছর আগে বিদ্যালয় এলাকা ভাঙন প্রবণ হওয়ায় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতর থেকে নির্মাণ কাজ বন্ধ রাখা হয়। সবশেষ গত রবিবারও তারা বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছেন। একদিনের মাথায় মঙ্গলবার দুপুরে পুরো ভবনটি পদ্মা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

সবুজ হোসেন জানালেন, একবছর আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে আজিমনগর উচ্চ বিদ্যালয় সরেজমিন পরিদর্শন শেষে জানানো হয়, যেহেতু বিদ্যালয়টি পদ্মার চরাঞ্চলে অবস্থিত, তাই সেটি রক্ষার কোনও প্রকল্প তারা নেবে না। এরপর থেকে ওপরের তলার কাজ শেষ না করার জন্য ঠিকাদারকে জানানো হয়। চার তলা নির্মাণ করতে সরকারকে প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয় করতে হয়েছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চৌধুরী আওলাদ হোসেন বিপ্লব জানান, ২০০৩ সালে বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়। বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা সাড়ে ৪০০। নদীগর্ভে বিলীনের শঙ্কা দেখার জাগার পর ছয় কিলোমিটার দূরে এনায়েতপুর গ্রামে ৮৯ শতাংশ জমি কেনা হয়। সেখানে পরবর্তী স্থাপনা নির্মাণ করা হবে। বিদ্যালয়টি থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষা দেবে ৪৮ শিক্ষার্থী।

তিনি আরও জানান, চরাঞ্চলের একমাত্র উচ্চ বিদ্যালয় ছিল এটি। কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও রক্ষা সম্ভব হয়নি। এক্ষেত্রে তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের গাফলতিকে দায়ী করেন। যেসব শিক্ষার্থী গত সপ্তাহে স্কুল করেছে। আজ সেখানে অথৈ পানি দেখা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা ও এনজিওকর্মী নাসির উদ্দিন জানান, স্কুলের অদূরে পদ্মা নদীতে অবৈধ ড্রেজিং করায় পানি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যালয়টি ভাঙনের কবলে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে প্রধান কার্যালয়ের একজন কর্মকর্তা, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের কর্মকর্তাসহ সোমবার স্কুলটি পরিদর্শন করেছেন। পদ্মার পানির যে স্রোত তাতে কোনোভাবেই স্কুলটি রক্ষা সম্ভব নয় মর্মে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও সচিবকে তারা লিখিতভাবে জানিয়েছেন।

উপজেলা চেয়ারম্যান দেওয়ান সায়েদুর রহমান জানান, তাদের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের সঙ্গে সঙ্গে বার বার তাগিদ দিয়েও বিদ্যালয় ভবনটির শেষ রক্ষা হয়নি। এটি চরাঞ্চলের একমাত্র উচ্চ বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টি অনত্র স্থানান্তরের কাজ চলছে।