‘১৫ ঘণ্টা অপেক্ষার পরও ফেরিতে উঠতে পারিনি’

কুষ্টিয়া থেকে বৃহস্পতিবার (২৩ জুন) বিকালে রওনা দেন ট্রাকচালক সোহাগ মিয়া। রাত ৯টায় রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার ওয়েট স্কেলে এসে আটকে পড়েন। শুক্রবার (২৪ জুন) দুপুর ১২টায় দৌলতদিয়া ৪ নম্বর ঘাটে দাঁড়িয়ে সোহাগ বলেন, ‌‘১৫ ঘণ্টা অপেক্ষার পরও ফেরিতে উঠতে পারিনি। গাড়িতে ১৯টি গরু রয়েছে। ভয় হচ্ছে, যে রোদ ও গরম পড়ছে তাতে কোনও গরু অসুস্থ হয়ে না পড়ে। যদি দ্রুত ফেরি পার হতে পারতাম তাহলে দুশ্চিন্তা দূর হতো।’

তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাক থেকে একটু নামতেও পারিনি। একটু একটু করে ট্রাক টানতে হয়। খোলা জায়গায় সিরিয়ালে থেকে ঠিকমতো খেতেও পারি না। রাতে একটু ঘুমাতেও পারিনি। আশপাশে কোনও পাবলিক টয়লেটের ব্যবস্থাও নেই। দৌলতদিয়া ঘাট দিয়ে যখনই পার হয়েছি যন্ত্রণা ছাড়া কখনও ফেরিতে উঠতে পারিনি।’

ট্রাকে থাকা গরু ব্যবসায়ী সিদ্দিক কাজী বলেন, ‘সারারাত গরুর ট্রাকের ওপরেই বসেছিলাম। হাতপাখা দিয়ে গরুগুলোকে বাতাস করেছি। ১২ ঘণ্টা পার হলো, তবুও ফেরিতে উঠতে পারলাম না। ফেরি পার হয়ে চট্টগ্রাম যেতে হবে। গরমে গরুগুলো নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তায় পড়েছি। কখন পার হতে পারবো কে জানে!’

ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মার মোড় পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার যানবাহনের সারি

সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত দৌলতদিয়া ঘাট ঘুরে দেখা যায়, পদ্মায় তীব্র স্রোতের কারণে সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ সারি তৈরি হয়েছে। প্রতিদিন বিকাল হলেই কাঁচামালবাহী ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাসের চাপ বাড়াতে থাকায় অপচনশীল ট্রাকের সারি তৈরি হয়। আজ ফেরিঘাটের জিরো পয়েন্ট থেকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পদ্মার মোড় পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার এলাকায় অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাকের সারি রয়েছে। এর মধ্যে দুেই কিলোমিটার যাত্রীবাহী বাসের সারি। এদিকে ঘাটের ওপর চাপ কমাতে ঘাট থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া আঞ্চলিক মহাসড়কে অপচনশীল পণ্যবাহী ট্রাকের তিন কিলোমিটার সারি রয়েছে।

যশোর থেকে হানিফ পরিবহনের বাসে ঘাটে আসেন শরিফ মাহমুদ। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষার পর বাধ্য হয়ে নেমে ব্যাগ নিয়ে হেঁটে লঞ্চঘাটে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আর কতক্ষণ বাসে বসে থাকবো? বিরক্ত হয়ে নেমে হেঁটে লঞ্চঘাটে যাচ্ছি। কাল পদ্মা সেতু চালু হচ্ছে। আশা করছি ঘাটে আর এরপর থেকে জ্যাম থাকবে না।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিসি) দৌলতদিয়া ঘাট শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক খোরশেদ আলম জানান, পদ্মা নদীতে প্রতিদিনই পানি বাড়ছে। তীব্র স্রোতে ফেরিগুলো ধীরগতিতে চলছে। প্রতিটি ফেরি লোড করাসহ নদী পার হতে এক ঘণ্টার বেশি সময়ে লাগছে। এতে ফেরির ট্রিপ সংখ্যা কমে গেছে, যার ফলে ঘাটে নদী পারের অপেক্ষায় কয়েকশ’ যানবাহন আটকে আছে। তবে আমরা পচনশীল ট্রাক ও যাত্রীবাহী বাস আগে পার করছি। বর্তমানে এই নৌপথে ছোট-বড় ১৯টি ফেরি যানবাহন ও যাত্রী পারাপারে চলাচল করছে।