শিক্ষক উৎপল হত্যা: যে কারণে স্কুলছাত্রী বহিষ্কার

সাভারের আশুলিয়ায় ‘প্রেমিকার’ কাছে হিরো সাজার জন্য স্ট্যাম্প দিয়ে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকাকে পিটিয়ে হত্যা করে আশরাফুল ইসলাম জিতু। এই ঘটনায় আশুলিয়ার হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে মূল অভিযুক্তকে আজীবন বহিষ্কার করলেও তার প্রেমিকাকে সাময়িক বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গ্রেফতার জিতু র‌্যাবের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছে, তার প্রেমিকার কাছে হিরো সাজার জন্য সে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। সেক্ষেত্রে এই ঘটনায় ওই মেয়ের প্ররোচনা থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে। এ ছাড়াও ঘটনাটি নিয়ে অনেকদিন ধরে অনান্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাকদের মধ্যে নানান সময়ে বিভিন্ন ধরনের সমালোচনা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে তারা খুবই বিব্রত। অন্যদিকে, ওই ছাত্রী যদি এখন ক্লাসে ফেরে তাহলে অনান্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এসব দিক বিবেচনা করে কলেজের শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ওই ছাত্রীকে বহিষ্কারের এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তদন্ত করছে। পরে ওই ছাত্রী যদি তদন্তে দোষী প্রমাণিত না হয় সেক্ষেত্রে তার সাময়িক বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে। এ ছাড়াও এসব ঘটনার জন্য কলেজশিক্ষক শরিফুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- শিক্ষক নাজমুল ও মঞ্জুরুল আলম। আগামী সাত দিনের মধ্যে এই কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে সামনে ঈদের বন্ধ থাকায় সময় বাড়িয়ে আগামী ১৬ জুলাই পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে ওই ছাত্রীর সংশ্লিষ্টতা থাকলে সেসব উঠে আসবে।’

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার এসআই এমদাদুল হক বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে। এ ছাড়াও মামলার প্রধান আসামি জিতু ও অপর আসামি তার বাবা উজ্জল হোসেন রিমান্ডে আছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় জিতুর প্রেমিকার প্ররোচনা আছে কি-না বিষয়টি তদন্তের স্বার্থে এখনই বলা যাচ্ছে না।’

এর আগে, শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ও ঘটনার মূলহোতা আশরাফুল ইসলাম জিতুকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ। পরে একই ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্তে জিতুর প্রেমিকার কলেজছাত্রীর সম্পৃক্ততা পাওয়ায় কলেজের শৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে তাকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

উল্লেখ্য, গত ২৫ জুন দুপুরে হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে শিক্ষক উৎপলকে ক্রিকেট স্ট্যাম্প দিয়ে আঘাত করেন ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র জিতু। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে সাভারের এনাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। সোমবার (২৭ জুন) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভোর সোয়া ৫টার দিকে তিনি মারা যান।

এ ঘটনায় উৎপল কুমারের ভাই বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় মামলা করেন। ২৮ জুন রাতে আশুলিয়া থানা পুলিশ জিতুর বাবা উজ্জ্বল হাজীকে কুষ্টিয়া এবং বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) মূল অভিযুক্ত আশরাফুল ইসলাম জিতুকে গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে গ্রেফতার করে র‍্যাব। গ্রেফতার আসামিদের পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

এদিকে শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার নিহতের ঘটনায় পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর হাজী ইউনুছ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে পাঠদান শুরু হয়েছে। আজ সকাল সাড়ে ৭টা থেকে প্রাথমিক শাখার এবং বেলা ১১টায় মাধ্যমিক ও কলেজ শাখার পাঠদান শুরু হয়।