যে গাছ ছাড়া খাইটা হয় না

কোরবানির পশুর মাংস কাটাকাটির কাজে ছুরি ও চাপাতির সঙ্গে আরেকটা জিনিসের দরকার পড়ে। গাছের শক্ত গুঁড়ি কেটে বানানো গোলাকার বস্তুটির নাম খাইটা। ফরিদপুরের বাজারে এবার খাইটা বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায়।

এই খাইটা বিক্রি করেই এক মৌসুমে ভালো উপার্জন করেন অনেকে। তবে ঈদুল আজহায় যেনতেন গুঁড়ি বিক্রি হলেও পেশাদার কসাইদের কাজে ব্যবহৃত খাইটার দাম আরও বেশি।

শহরের রেলস্টেশন সড়কের প্রবেশমুখে দেখা গেলো খাইটার বিশাল বাজার। সেখানে খাইটা সাজিয়েছেন চা দোকানি জাফর শেখ। তিনি জানালেন, পাহাড়ি এলাকা থেকে আনা তেঁতুল গাছের গুঁড়ি গোল করে কেটে তিনি নিজেই খাইটাগুলো বানিয়েছেন।

জাফর শেখ আরও বললেন, খাইটা বানাতে তেঁতুল কিংবা বেল গাছের গোটা গুঁড়ি হলে ভালো। তবে বেল গাছ তেমন পাওয়া যায় না। তাই এ কাজে এখন তেঁতুল গাছের চাহিদাই বেশি। এমনকি সমতলের চেয়ে পাহাড়ি অঞ্চলের তেঁতুলের গুঁড়িই নাকি সহজলভ্য, দামেও কম।

পশুর হাড় কাটতে চাপাতি দিয়ে জোরালো কোপ দিতে হয়। অন্যান্য গাছ দিয়ে বানানো গুঁড়ি ওই আঘাত সহ্য করতে পারে না। আবার অনেক সময় অন্য কাঠের খাইটার গুঁড়ি থেকে কাঠের টুকরো মাংসে লেগে থাকে।

শহরের পূর্ব খাবাসপুরের কসাই রাজা জানান, সারা বছরই খাইটা ব্যবহার করতে হয় তাদের। তাদেরটা আকারে বড় ও মজবুত হয়। তারা যেটা ব্যবহার করেন সেটার দাম হাজার টাকারও বেশি।

মধুখালীর মেগচামির আবুল কালাম বিশ্বাস নামের একজন কসাই জানান, একটি গরু কাটার কাজে তিনি প্রতি ১০ হাজারে (গরুর দাম) ২৫০ টাকা মজুরি নেন। সেই হিসাবে এক লাখ টাকা দামের একটি গরুর জন্য দিতে হয় আড়াই হাজার টাকা।

তবে অনেকে নিজেদের কোরবানি দেওয়া পশুর হাড়-মাংস কাটার কাজ নিজেরাই করেন। তাতেও অবশ্য খাইটার দরকার পড়ে। তাই শেষ মুহূর্তের বাজারে পশুর পাশাপাশি এ অনুষঙ্গটি বিক্রিতেও হিড়িক পড়ে।

খাইটা কিনতে আসা রহিম শেখ বলেন, বছরে একদিনের জন্য এ খাইটা কিনতে আসা। প্রতিবছরই একটা করে কিনি। আগের বছরেরটা অযত্নে নষ্ট হয়ে যায়। এবার দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে, কিন্তু কোরবানির সময় দাম তো একটু বেশি হবেই। এটা তো আর সবসময় পাওয়া যায় না।