চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে কোরবানির পশুর চামড়া কিনে লোকসানে পড়েছেন উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভার শত শত মৌসুমি ব্যবসায়ী। বিক্রি করতে না পেরে উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও রাস্তার পাশে ফেলে যাওয়া চামড়া পচে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। এতে মানুষের চলাফেরা করতে চরম অসুবিধা হচ্ছে। চামড়া বিক্রি করতে না পেরে অনেকে চামড়া মাটিতে পুঁতে ফেলেছেন। চামড়া অনেকেই বিক্রি করতে পারেননি। আবার যে সকল মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া কিনেছেন তাদের অনেককেই লোকসান গুনতে হয়েছে।
মীরসরাই উপজেলার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী কামরুল হোসেন বলেন, ‘লাভের আশায় চামড়া কিনে উল্টো লোকসান গুনতে হয়েছে। জীবনে আর কোনোদিন এ ব্যবসা করবো না। সরকারের পক্ষ থেকে বেশি মূল্য নির্ধারণ করায় ২০০ চামড়া ক্রয় করেছি। প্রতি পিস চামড়া ২০০-৩০০ টাকা কিনতে হয়েছে। ঈদে সারা দিন ঘুরে ঘুরে চামড়া সংগ্রহ করে বিকালে বাজারে তোলার পর প্রথম ৪-৫ ঘণ্টা কেউ জিজ্ঞেস করতেও আসেনি। পরে রাতে আমার ছোট ভাই গড়ে ২৫০ টাকা করে লোকসানে সব চামড়া বিক্রি করে দিয়ে কোনোরকম রেহাই পেয়েছি।’
শুধু কামরুল নয়, এভাবে চামড়া কিনে লোকসানে পড়েছেন মীরসরাই উপজেলার ১৬টি ইউনিয়ন ও দুই পৌরসভার শত শত মৌসুমি ব্যবসায়ী। মীরসরাই পৌরসভা এলাকার মোহাম্মদ ননাই বলেন, ‘অর্ধশত চামড়া কিনেছি, পরে লোকসানে পানির দরে বিক্রি করেছি। চামড়া সংগ্রহ করা শ্রমিকের মজুরিও ওঠেনি।’
করেরহাট এলাকার বাসিন্দা কামরুল ইসলাম বলেন, ‘সরকার চামড়া সিন্ডিকেট ভাঙতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ঈদের আগে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হলেও তা কার্যকর করতে পারেনি। মধ্যখানে কিছু মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীদের পুঁজি হারাতে হলো। অথচ চামড়াজাত পণ্যের দাম আকাশচুম্বী। এত দামি জিনিসটা সরকার যথাযথ ব্যবহার করতে পারলো না।’ তিনি আরও বলেন, ‘করেরহাট বাজারে ক্রেতার অভাবে চামড়া ফেলে চলে যান ব্যবসায়ীরা। দুদিন ধরে তীব্র গন্ধে বাজারের পরিবেশ নষ্ট হয়ে গেছে।’
উপজেলার ডোমখালী এলাকার বাসিন্দা সাদেক হোসেন বলেন, ‘প্রতিবছর দুয়েকশ টাকায় কোরবানি পশুর চামড়া বিক্রি করে থাকি, এবার তো কেউ কিনতেই আসলো না। পরে মাটিতে পুঁতে ফেলতে বাধ্য হয়েছি। সরকার নাকি এবার কোরবানি পশুর চামড়ার দাম বাড়িয়েছেন। উল্টো কেউ কিনতে আসেনি। শুধু আমি নয়, আমার এলাকার অনেকে পশুর চামড়া বিক্রি করতে পারেনি।’
মধ্যম ওয়াহেদপুর এলাকার নিজাম উদ্দিন, আবু জাফর বলেন, ‘এবার সারা দিন চলে গেলেও কেউ চামড়া ক্রয় করতে আসেনি। পরে টেরিয়াইল মাদ্রাসায় দিয়ে দিয়েছি। শুধু আমরা নয়, আমাদের এলাকার অনেকে চামড়া এতিমখানায় দিয়েছে।’
উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা রেজাউল করিম বলেন, ‘ঈদের দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ চামড়া কিনতে আসেনি। পরবর্তীতে চামড়া স্থানীয় এতিমখানায় ফ্রিতে দিয়ে এসেছি। মার্কেটে চামড়ার তৈরি জুতা, বেল্টের যে দাম নেওয়া হয় তার ছিটেফোঁটা দিয়েও চামড়া কেনা হচ্ছে না। এতে করে দেশের গরিব অসহায় জনগণ বঞ্চিত হচ্ছে তাদের হক থেকে।’
বড়তাকিয়া বাজারের চামড়া ব্যবসায়ী নুর উদ্দিন জানান, তিনি প্রায় ৬০০ চামড়া কিনেছেন। প্রতিটি চামড়া ১০০-৩০০ টাকা দরে কিনেছেন। তার সবগুলো চামড়াতে শ্রমিক দিয়ে লবণযুক্ত করতে হবে। এতে পরিবহন খরচ ও শ্রমিকের পারিশ্রমিকের কারণে চামড়ার ক্রয়মূল্যও বেড়ে যাবে।
জানা গেছে, ঈদের দিন কম দামে চামড়া কিনে বিপাকে পড়েছেন অনেক চামড়া ব্যবসায়ী। সারা রাত অপেক্ষা করেও চামড়া বিক্রি করতে পারেননি। ফলে পচন ধরে দুর্গন্ধ বের হওয়ায় অনেকে তা ফেলে চলে যান। এদিকে প্রশাসন থেকে অবিক্রীত চামড়ার জন্য বিনা মূল্যে লবণ বিতরণের ঘোষণা থাকলেও সাধারণ মানুষ তা জানতেন না। অবিক্রীত চামড়ায় লবণ দিয়ে বিক্রির কথা বলা হয়ে থাকলেও ব্যবসায়ীরা তা করেননি। ফলে ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাতে পচন ধরে পুরো এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে।
মীরসরাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোমাইয়া আক্তার জানান, সরকার চামড়া বিক্রির দাম প্রকাশ করেছে। কীভাবে সংরক্ষণ করতে হবে তা-ও বলে দিয়েছে। বিনা মূল্যে লবণ দেওয়ার ব্যবস্থাও করেছে সরকার। প্রত্যেক এলাকায় চামড়া সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তারপরও ব্যবসায়ীরা বেশি লাভের আশায় নিয়ম মানতে নারাজ।