দুবার কারাভোগ শেষে জামিনে বেরিয়ে চলন্ত বাসে ডাকাতি-সংঘবদ্ধ ধর্ষণ 

টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে ডাকাতি ও সংঘবদ্ধভাবে নারী যাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতারকৃত ১০ জনকে জেলা গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে র‌্যাব। সোমবার (৮ আগস্ট) রাতে চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী রতন হোসেনসহ ১০ জন আসামিকে ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হয়।

র‌্যাব জানায়, বাসের হেলপারের ছদ্মবেশে ২০১৮ সাল থেকে যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন স্থানে ডাকাতি করে আসছিল রতন হোসেন (২১)। রতন এই চক্রের দলনেতা। তার অধীনে ১৩ থেকে ১৫ জন্য সদস্য রয়েছে। ডাকাতির ঘটনায় দুই দফার কারাভোগও করেছে। দ্বিতীয় দফায় ৯ মাস কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে আসে এবং পুনরায় যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতি করে দলনেতা হয় রতন।

টাঙ্গাইল র‌্যাব-১২-এর ৩ নম্বর কোম্পানি কমান্ডার মেজর মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, সোমবার (৮ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে রতনসহ গ্রেফতার ১০ জনকে ঢাকা থেকে টাঙ্গাইলে আনা হয়। এরপর রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাদের গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর আগে রবিবার (৭ আগস্ট) তাদের ঢাকা, গাজীপুর ও সিরাজগঞ্জ থেকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-১২ ও ১৪।

ডাকাত দলের গ্রেফতারকৃত বাকি সদস্যরা হলো মো. আলাউদ্দিন (২৪), সোহাগ মন্ডল (২০), খন্দকার হাসমত আলী ওরফে দীপু (২৩), বাবু হোসেন ওরফে জুলহাস (২১), মো. জীবন (২১), আব্দুল মান্নান (২২), নাঈম সরকার (১৯), রাসেল তালুকদার (৩২) ও আসলাম তালুকদার ওরফে রায়হান (১৮)। 

এর আগে রাজা মিয়া, আউয়াল ও নুরনবীকে গ্রেফতার করা হয়। সব মিলিয়ে এ মামলায় ১৩ জনকে গ্রেফতার করা হলো। রাজা মিয়া, আউয়াল ও নুরনবী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। এই তিন জন বর্তমানে টাঙ্গাইল জেলা কারাগারে রয়েছে।

টাঙ্গাইল জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘এ মামলায় গ্রেফতারকৃত ১০ জনকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করেছে র‌্যাব। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। মঙ্গলবার আসামিদের আদালতে তোলা হবে। এর আগে গ্রেফতারকৃত তিন জন কারাগারে রয়েছে। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।’  

প্রসঙ্গত, ঈগল এক্সপ্রেসের বাসটি মঙ্গলবার (২ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে ছাড়ে কুষ্টিয়া থেকে। গন্তব্য ছিল নারায়ণগঞ্জ। রাত সাড়ে ১১টার দিকে পৌঁছে সিরাজগঞ্জের একটি হোটেলে। মহাসড়কের পাশের ওই হোটেলে যাত্রীরা খাওয়া-দাওয়া করেন। যাত্রাবিরতি শেষে রাত ১২টার দিকে গন্তব্যের দিকে রওনা দেয় বাসটি। এরপরই সিরাজগঞ্জ জেলার মধ্যেই তিন ধাপে ১৩ জন বাসটিতে ওঠে। তখনও বাসে থাকা যাত্রীরা বুঝতে পারেননি আগামী কয়েক ঘণ্টায় কী ঘটতে যাচ্ছে। এরপরই শুরু হয় তিন ধাপে বাসে ওঠা ১৩ ডাকাতের তাণ্ডব। প্রথমে চালকের গলায় ছুরি ঠেকিয়ে বেঁধে ফেলে চালক, হেলপার ও সুপারভাইজারকে। এরপর যাত্রীদের বেঁধে বাসটি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে লুট করে মালামাল। লুটপাট শেষে এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণ করে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ডাকাতি চালিয়ে টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার রক্তিপাড়ায় একটি বালুর স্তূপে বাসটি উল্টে গেলে ডাকাত দল পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় মধুপুর থানায় ওই বাসের এক যাত্রী বাদী হয়ে অজ্ঞাত ১০-১২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।