‘নতুনভাবে বাঁচতে তাদের প্রেরণা জুগিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী’

কিশোরগঞ্জ জেলার আট শতাধিক নারী-পুরুষকে গত দুই-তিন বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে চিকিৎসার জন্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এসব অর্থে চিকিৎসা করিয়ে অনেকে এখন সুস্থ জীবনযাপন করছেন। অনেকে চিকিৎসাধীন আছেন। বিপদের সময় পাশে দাঁড়িয়ে তাদের নতুনভাবে বাঁচতে প্রেরণা জুগিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঋণী তারা।

ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত হয়েছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মো. আল আমিন (৩২)। দুবার অপারেশন করতে হয়। এতে ২১ লাখ টাকা খরচ হয়। শেষে ভারতে গিয়ে থেরাপি নিতে বলেন চিকিৎসকরা। কিন্তু থেরাপি নেওয়ার খরচ ছিল না। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেন। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে পাঁচ লাখ টাকা দেওয়া হয়। গত ফেব্রুয়ারি মাসে সে টাকায় ভারতে গিয়ে থেরাপি নেন। এখন সুস্থ আল আমিন।

কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলার পশ্চিম দ্বীপেশ্বর গ্রামের জামাল মিয়া (৫২) শ্রমিকের কাজ করতেন। দুই বছর আগে চিনির বস্তা মাথা থেকে পড়ে মারাত্মক আহত হন। এতে ডান হাত অচল হয়ে পড়ে। টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না। তিনিও প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে ২০ হাজার টাকা পান। ওই টাকায় চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ হন।

ছয় মাস আগে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে ৩০ হাজার টাকা পান বৃদ্ধ আব্দুস সাত্তার। ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য আবেদন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। নিজের জমানো কিছু টাকার সঙ্গে অনুদানের টাকা যোগ করে চিকিৎসা করিয়েছেন। আগে ঠিকমতো হাঁটতে পারতেন না। চিকিৎসার পর ভালোভাবেই চলাফেরা করতে পারছেন।

চার ছেলে থাকলেও ৬০ বছরের ফিরোজা বেগমের খোঁজ নেন না। তাকে দেখার কেউ নেই। তার চিকিৎসার জন্য দেওয়া হয় ৩০ হাজার টাকা। চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে ভালোভাবে চলাফেরা করছেন বলে জানালেন ফিরোজা। বললেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমি ঋণী।’

শুধু তারা নন, হোসেনপুরসহ কিশোরগঞ্জ জেলার আট শতাধিক নারী-পুরুষকে গত দুই-তিন বছরে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে চিকিৎসার জন্য প্রায় ৩০ কোটি টাকা দেওয়া হয়। এসব অর্থে চিকিৎসা করিয়ে অনেকে এখন সুস্থ জীবনযাপন করছেন।

চিকিৎসার জন্য অনুদানপ্রাপ্তরা বর্তমানে কেমন আছেন, তাদের আরও কোনও সহযোগিতার প্রয়োজন আছে কিনা, তা জানতে মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) দুপুরে হোসেনপুরে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

হোসেনপুর উপজেলা পরিষদের আসাদুজ্জামান খান মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন। অনুষ্ঠানে চিকিৎসা সহায়তা পাওয়া অনেকে উপস্থিত ছিলেন।  

চিকিৎসার অর্থ পাওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে মো. আল আমিন বলেন, ‘বিপদের সময় আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। ওনার সহায়তা না পেলে আমার চিকিৎসা হতো না। আমার মতো অনেকে চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর অনুদান পেয়েছেন। তারা সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন। অনেকের চিকিৎসা চলছে। কাউকে যখন পাশে পাইনি, তখন উনি আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমাদের নতুনভাবে বাঁচতে প্রেরণা জুগিয়েছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা ঋণী। ওনার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’

আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘চিকিৎসার পর ভালোভাবেই চলাফেরা করতে পারছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।’

এসব টাকা পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুনের ভূমিকার কথা স্বীকার করেন উপকারভোগীরা।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী কৃষিবিদ মশিউর রহমান হুমায়ুন বলেন, ‘গত দুই-তিন বছরে হোসেনপুরসহ জেলার আট শতাধিক মানুষকে চিকিৎসা সহায়তা বাবদ প্রায় ৩০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে এসব টাকা দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে আমি আমার দায়িত্বটুকু পালন করেছি। মানবসেবায় এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।’ 

এরপর একই স্থানে জাতীয় শোক দিবস ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে আলোচনা সভা ও মিলাদ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। হোসেনপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহেলের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখেন, হোসেনপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাবেয়া পারভেজ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম নুরু মিয়া, পৌরসভার মেয়র আব্দুল কাইয়ুম খোকন, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ হালিমসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিরা।