দুদিনের ছুটি নিয়ে ৫ মাস ধরে স্পেনে, স্কুলশিক্ষিকার বেতন বন্ধ

স্পেনে অবস্থান করা মাদারীপুরের শিবচরের সেই স্কুলশিক্ষিকার বেতন-ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে জেলা শিক্ষা অফিস। একইসঙ্গে গত চার মাসের বেতন ফেরত এনে চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে।

দুদিনের ছুটি নিয়ে পাঁচ মাস ধরে স্পেনে অবস্থান করায় চলতি মাস থেকে তার বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় শিক্ষিকা সোনিয়া আক্তার, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ চার জনকে শোকজ করা হয়েছে।

বুধবার (৩১ আগস্ট) বিকালে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন মাদারীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন। ‘স্পেনে থেকেও বেতন নিচ্ছেন স্কুলশিক্ষিকা’ শিরোনামে ২৫ আগস্ট বাংলা ট্রিবিউনে সংবাদ প্রকাশের পর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলো জেলা শিক্ষা অফিস। সোনিয়া আক্তার শিবচর উপজেলার ১০ নং পূর্ব কাচিকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শিক্ষিকা সোনিয়া আক্তার গত ২৮ মার্চ স্কুল থেকে দুদিনের ছুটি নেন। এরপর থেকে আর স্কুলে আসেননি। তবে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে তিনি প্রতি মাসে বেতন-ভাতা নিচ্ছিলেন। এ নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসে জেলা শিক্ষা অফিস ও উপজেলা প্রশাসন।

শিক্ষিকা সোনিয়া আক্তারের বাবা জাকির হোসেন বলেন, ‘বিদ্যালয় থেকে ছুটি নিয়ে এপ্রিল মাসে স্পেনে স্বামীর কাছে গেছে আমার মেয়ে। গত চার মাস ধরে সেখানে আছে।’

কাচিকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জামিলা বেগম বলেন, ‘স্কুল থেকে দুদিনের ছুটি নিয়েছিলেন সোনিয়া আক্তার। এরপর থেকে তার মোবাইল নম্বর বন্ধ। পরে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানান, আমি মেডিক্যাল ছুটি নিয়ে এসেছি। আপনি মেডিক্যাল ছুটি লিখে রিটার্ন জমা দিয়ে দেন। তখন আমি মেডিক্যাল ছুটি লিখে রিটার্ন জমা দিয়েছি। সংবাদ প্রকাশের পর জানতে পারলাম তিনি স্পেনে আছেন।’

এ ব্যাপারে শিবচর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রধান শিক্ষক আমাকে জানাননি ওই শিক্ষিকা দেশের বাইরে কিংবা মেডিক্যাল ছুটিতে আছেন। আমার কাছে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় তার বেতন-ভাতা বন্ধ করতে পারিনি। বন্ধ করার ক্ষমতাও ছিল না। পরে বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানাই।’

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‌‘শিক্ষিকা সোনিয়া আক্তারকে কারণ দর্শানোর জন্য বলা হয়েছে। একইসঙ্গে গত চার মাসের বেতন ফেরত এনে চালানের মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া হয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কার্যক্রম চলছে। এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সংশ্লিষ্ট ক্লাস্টারের সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ আরও তিন জনকে শোকজ করা হয়েছে।’

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ওই শিক্ষিকার বেতন-ভাতা বন্ধ করে দিয়েছি আমরা। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলেছি, যেন ওই শিক্ষিকা এবং সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’

শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাজিবুল ইসলাম বলেন, ‘ওই শিক্ষিকাকে শোকজ করা হয়েছে। তার বেতন-ভাতা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে আরও তিন শিক্ষা কর্মকর্তাকে শোকজ করা হয়েছে।’

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব কাচিকাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বর্তমানে ছয় জন সহকারী শিক্ষক রয়েছেন। পদ রয়েছে আট জনের। বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দুই শতাধিক। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে প্রাক-প্রাথমিকে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন সোনিয়া। বিদ্যালয়ে তিনি প্রাক-প্রাথমিকের ক্লাসসহ পঞ্চম শ্রেণির ইংরেজি ও তৃতীয় শ্রেণির বিজ্ঞানের ক্লাস নিতেন। বর্তমানে তার ক্লাসগুলো অন্য শিক্ষকরা নিচ্ছেন।