দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ভাঙন

দিনে ফেলা জিওব্যাগ রাতেই ভেসে যাচ্ছে

পদ্মা নদীর পানি বাড়ায় রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ফেরিঘাটে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে। তিন দিনে ঘাট এলাকায় প্রায় ১০০ মিটারের মতো ভেঙে গেছে। মাটি ধসে ৫ নম্বর ফেরিঘাট দিয়ে যানবাহন ওঠানামা বন্ধ রয়েছে। ঝুঁকিতে রয়েছে আরও দুটি ঘাট। ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। তবে এসব ব্যাগ টিকছে না। দিনে ফেললে রাতের মধ্যেই তীব্র স্রোতে ভেসে যাচ্ছে এসব ব্যাগ।

সরেজমিন দেখা গেছে, ৪ নম্বর ফেরিঘাট থেকে ৫ নম্বর ফেরিঘাট পর্যন্ত নদীভাঙনের স্থানে বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হচ্ছে। ভাঙনের জায়গায় এ পর্যন্ত সাড়ে চার হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে। গভীরতা অনেক হওয়ায় সেখানে জিওব্যাগ দিয়ে নদীর পাড় ভরাট করতে অনেকটাই হিমশিম খাচ্ছেন শ্রমিকরা।

৫ নম্বর ফেরিঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী শাহজাহান শেখ বলেন, ‘ভাঙনের কারণে তিন দিন ধরে ৫ নম্বর ঘাটটি বন্ধ রয়েছে। দিনের চেয়ে নদীতে রাতে বেশি স্রোত থাকে। ফলে ভাঙন রাতেই বেড়ে যায়। দিনের বেলায় যেসব জিওব্যাগ ফেলা হয় রাতে সেগুলো তীব্র স্রোতে ভেসে যাচ্ছে। পন্টুনের আশপাশে যেসব খাবারের হোটেল রয়েছে, তা ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। আমার দোকানটাও ঝুঁকিতে রয়েছে, যেকোনও মুহূর্তে নদীগর্ভে চলে যেতে পারে।’

দিনে জিওব্যাগ ফেললে রাতের মধ্যেই তীব্র স্রোতে ভেসে যাচ্ছে

ফেরিঘাট এলাকার বাসিন্দা নুরু কাজী বলেন, ‘নদীভাঙনের কারণে আমি চারবার বাড়ি সরিয়ে নিয়েছি। ৫ নম্বর ফেরিঘাট যেভাবে ভেঙে যাচ্ছে, তাতে আমাদের বাড়িঘর আবারও নদীগর্ভে চলে যাবে। ব্যবস্থা নিতে বললে এলাকার চেয়ারম্যান ও রাজবাড়ীর এমপিরা শুধু বলেন ‘‘নদী শাসন’’। কিন্তু কবে হবে এই নদী শাসন?’

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, দৌলতদিয়া ঘাট আধুনিকায়নের জন্য লঞ্চঘাট ও আটটি ফেরিঘাটসহ দৌলতদিয়া ও দেবগ্রাম ইউনিয়নের চার কিলোমিটার স্থায়ী নদী শাসনের জন্য ৫১০ কোটি টাকার কাজ করা হবে, যার নকশা অনুমোদনের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) রয়েছে।

নদী ভাঙন ঠেকাতে সাড়ে চার হাজার বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) উপ-সহকারী প্রকৌশলী মকবুল হোসেন জানান, দৌলতদিয়া ঘাটের ভাঙন রোধে বিআইডব্লিউটিএ কাজ করে যাচ্ছে। ভাঙন রোধে ৪ নম্বর ফেরিঘাট হতে ৫ নম্বর ফেরিঘাট পর্যন্ত ১৫০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জিওব্যাগ ফেলার কাজ চলছে। তীব্র স্রোতে কিছু বস্তা নদীতে চলে যাচ্ছে। এ পর্যন্ত নদীভাঙন ঠেকাতে সাড়ে চার হাজার বালুভর্তি জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে। যতক্ষণ পর্যন্ত নদীভাঙন রোধ না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত জিওব্যাগ ফেলা হবে।

রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী আরিফুর রহমান অঙ্কুর বলেন, ‘দৌলতদিয়া ঘাট আধুনিকায়নের প্রকল্পটি বুয়েট কর্তৃক নকশা (রেটিং) অনুমোদন হওয়ার পর স্থায়ী নদী শাসনের কাজ শুরু হবে। লঞ্চঘাট ও আটটি ফেরিঘাটসহ চার কিলোমিটার স্থায়ী নদী শাসন করা হবে।’