বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা পড়ার সুযোগ পেলেন বেলায়েত

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির স্বপ্ন পূরণ হচ্ছে গাজীপুরের শ্রীপুরের ৫৫ বছর বয়সী বেলায়েত শেখের। রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তিনি। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন।

বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান শাতিল সিরাজ বেলায়েত শেখের উত্তীর্ণের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, অনুষ্ঠিত ৬০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার মধ্যে তিনি ৩২ নম্বর এবং অন্যান্য অ্যাকাডেমিক যোগ্যতায় পেয়েছেন ৩৬ নম্বর। সবমিলিয়ে ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় ৬৮ নম্বর পেয়ে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন।

বেলায়েত শেখ জানান, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন। এর প্রস্তুতি নিতে গিয়ে তিনি প্রচুর লেখাপড়া ও অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পেরেছেন। বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণের মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও লেখাপড়ার ইচ্ছা পূরণ হলো।

১৯৬৮ সালে জন্ম নেওয়া বেলায়েত গাজীপুর জেলার শ্রীপুর পৌরসভার কেওয়া পশ্চিমখন্ড এলাকার মৃত হাসেন আলী শেখ ও জয়গন বিবির চার সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয়। ছোট থেকেই তার পড়াশোনার প্রতি ছিল আগ্রহ। তবে পরিবারের দরিদ্রতার কারণে তখন তা হয়ে ওঠেনি। ১৯৮৩ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা (এসএসসি) দেওয়ার কথা ছিল। তবে সে সময় তার বাবা হাসেম আলী শেখ অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরীক্ষার ফরম ফিলআপ করতে পারেননি। পরের বছর বন্যায় ও এরপর মা অসুস্থ হয়ে পড়লে আর লেখাপড়া করা হয়নি বেলায়েতের।

পরে মেকানিক্যাল কোর্স করে মোটর গাড়ির ওয়ার্কশপে কাজ শুরু করেন। তা দিয়েই চলে সংসার। সঙ্গে ভাই-বোনদের পড়াশোনার দায়িত্ব পড়ে তার কাঁধে। বেলায়েত শেখ বলেন, ‘আমার মায়ের পর মেয়েকে অনেক ভালোবাসি। স্বপ্ন ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। তবে সেটি আর হয়ে ওঠেনি। ছোট ছেলে বিগত বছর মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেছে। সেও পড়ছে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে।’

তিনি জানান, চলতি বছর ঢাকা মহানগর কারিগরি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি-ভোকেশনাল) জিপিএ ৪.৪৩ নিয়ে পাস করেন। এর আগে ২০১৯ সালে রাজধানীর বাসাবোর দারুল ইসলাম আলিম মাদ্রাসা থেকে জিপিএ ৪.৫৮ পেয়ে মাধ্যমিক সমমান দাখিল (ভোকেশনাল) পাস করেন। সবকিছু পেছনে ফেলে আবার পড়াশোনা করে করে পঞ্চাশোর্ধ্ব বেলায়েত তার স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ‘আজকের ছেলে-মেয়েরা অনলাইনে যে সময় ব্যয় করে, তারা যদি লেখাপড়ার পেছনে এ সময় দেয় তাহলে অনেক সফল হবেন। আমার পড়াশোনার অনুপ্রেরণা প্রথমে আমার মা। এ ছাড়া শ্রীপুর কারিগরি কলেজের প্রভাষক বন্ধুবর সিদ্দিক ও ওনার স্ত্রী মারুফা এবং অধ্যক্ষ সেলিমের ভাইয়ের কারণে এতদূর আসতে পেরেছি।’