ব্যস্ত সময় পার করছেন ঢাক-ঢোলের কারিগররা  


গ্রামের সবাই একসময় ঢাক-ঢোলের কারিগর ছিলেন। বাদ্যযন্ত্র তৈরি ও মেরামতের আয় দিয়ে চলতো তাদের সংসার। কিন্তু সেই রমরমা দিন আর নেই। যান্ত্রিক বাদ্যযন্ত্রের দাপটে আজ দেশীয় বাদ্যযন্ত্র অনেকটাই কোণঠাসা। এ অবস্থায় আয়-রোজগারও কমেছে কারিগরদের। তাইতো কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের নিয়ামতপুর ইউনিয়নের ঋষিপাড়ার লোকজন ছেড়ে দিচ্ছেন পূর্বপুরুষের পেশা। তবে পূজাপার্বণে ঋষিপাড়ার বাসিন্দাদের কদর বাড়ে। বাদ্যযন্ত্রের নানা ধরনের কাজ পান তারা। আর এ সময়টাতে জেগে ওঠে পুরো পাড়া, ঢাক-ঢোলসহ নানা বাদ্যযন্ত্রের শব্দ ভেসে আসে দিনে ও রাতে। 

কথা হয় ঋষিপাড়ার ঢাক-ঢোলের কারিগর অতুল মণিঋষির সঙ্গে। তিনি বলেন, পুরো বছর প্রায় বেকারই থাকতে হয়। হাতে তেমন কাজকর্ম থাকে না। সামনে দুর্গাপূজা, মণ্ডপে বাজবে ঢাক-ঢোল। এ উপলক্ষে কিছু কাজ পেয়েছি। তাই ব্যস্ত সময় পার করছি। 

এ সময়টাতে কেবল তিনিই নন, যারা এ পেশা ধরে রেখেছেন, মোটামুটি সবাই ঢাক-ঢোল কিংবা খোল তৈরি ও মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কারণ পূজা শুরুর আগেই শেষ করতে হবে সব কাজ। অনেকে আবার মণ্ডপে বাদ্যযন্ত্রও বাজাবেন। তারাও দলবল নিয়ে নিয়মিত মহড়া দিচ্ছেন।  

পূজার আগে বাদ্যযন্ত্র মেরামতে পরিবারের নারী-পুরুষ সবাই মিলে ব্যস্ত সময় পার করছেনঅমর চন্দ্র মনি ঋষি বলেন, বিশ-ত্রিশ বছর আগেও ঋষিপাড়ায় শতাধিক পরিবার ঢাক-ঢোলের কাজ করতো। এখান থেকে সারা দেশে পাঠানো হতো ঢাক-ঢোলসহ দেশি বাদ্যযন্ত্র। এসব বাদ্যযন্ত্রের কদর কমে যাওয়ায় অনেকে এ পেশা ছেড়ে চলে গেছে অন্যপেশায়। পূর্বপুরুষের কাজে বর্তমানে ২০-২২টি পরিবার কোনোরকমে টিকে আছে।
 
বাবার কাছে কাজ শিখেছেন উজ্জ্বল মনিঋষি। আবার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাদ্যযন্ত্র বাজানোর চুক্তিও করেন। দল তৈরি করে বিভিন্ন পূজাপার্বণ ও বিয়ের অনুষ্ঠানে কাজ করেন। 

তিনি বলেন, ছোট থেকেই বাবা-দাদাকে এই কাজ করতে দেখেছি। কিন্তু দিন দিন বাদ্যযন্ত্র তৈরির এই পেশাটি হুমকির মুখে পড়েছে। তার একটি বড় কারণ আধুনিক বাদ্যযন্ত্র। এসব যন্ত্র বাজারে আসায় আমরা যারা দেশি বাদ্যযন্ত্র তৈরি ও বাজিয়ে থাকি, তারা নানাবিধ সমস্যার সম্মুখিন হচ্ছি। এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আহ্বান জানান তিনি।

বাদ্যযন্ত্র তৈরির কারিগর সুরমিত চন্দ্র ঋষি দাস বলেন, আমাদের পুরো পরিবার বেঁচে আছে এই পেশার ওপর নির্ভর করে। কিন্তু বর্তমানে এ পেশায় থেকে ছেলে-মেয়েদের মানুষ করা খুব কষ্টকর হয়ে গেছে। আর তারাও এ কাজটি শিখতে আগ্রহ দেখায় না। তাই এ শিল্পের টিকে থাকা নিয়ে খুব চিন্তায় আছি। তবে সরকার যদি কোনও উদ্যোগ নেয়, তাহলে হয়তো যারা এ পেশাটিকে ছেড়ে অন্য পেশায় চলে গেছেন তারাও হয়তো ফিরে আসতে পারে।

এদিকে ঋষিপাড়ার কারিগরদের জীবনজীবিকা ও পেশার এই সংকট কাটাতে সবধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম। তিনি বলেন, কালের বির্বতনে অনেক পেশাই হারিয়ে যাচ্ছে। সময়ের সঙ্গে পাল্লা নিয়ে অনেকেই নতুন নতুন পেশায় নাম লিখিয়েছেন। আমরা ঋষিপাড়ায় গিয়ে সবার সঙ্গে কথা বলবো এবং কীভাবে শিল্পকে টিকিয়ে রাখা যায় সে চেষ্টা করবো।