অবাধে পদ্মাচরের মাটি-বালু লুট

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ইউনিয়নের ছাত্তার মেম্বারের পাড়া ও চর করনেশন এলাকায় পদ্মা নদীর চর থেকে অবাধে মাটি-বালু লুট করছে একটি চক্র। মাটি কাটার স্থান থেকে মাত্র ২০০ গজ এলাকার মধ্যে দৌলতদিয়ার ৭ নম্বর ফেরিঘাট ও একটি গ্রাম। ওই এলাকায় দৌলতদিয়া ঘাট আধুনিকায়ন প্রকল্পের আওতায় ১৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নদী শাসন, একটি ফেরিঘাট ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ শিগগিরই শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু অবাধে মাটি ও বালু কাটার ফলে এলাকাটি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।

স্থানীয়রা বলছেন, প্রতিদিন শত শত ট্রাকে চর থেকে অবৈধভাবে তোলা মাটি ও বালু বিক্রি করা হচ্ছে। মাটি-বালুবাহী এসব যান চলাচলের কারণে এলাকার একমাত্র রাস্তারও বেহাল দশা হয়েছে। এর ফলে সাধারণ মানুষকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, মাটি কাটার যন্ত্র দিয়ে দেদারছে চরছে মাটি ও বালু উত্তোলন। ছোট-বড় ট্রাকে দিন-রাত এই মাটি-বালু বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। সেই সঙ্গে চলছে ইটভাটায় মাটি বিক্রি করে। এভাবে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া হচ্ছে।

Rajbari-2

মাটি কেটে ট্রাকে লোড-আনলোডের হিসাবের কাজে ব্যস্ত মুসা জানান, তিনি মাটি কেটে কোন ইটভাটায় যাবে সেই হিসাব করেন। মাটি কে কাটছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘রিপন ভাইয়ের নির্দেশে মাটি কাটা হচ্ছে।’

অবিরাম মাটি ও বালুবাহী ট্রাক চলাচলের কারণে দৌলতদিয়ার আক্কাস আলী হাই স্কুলের পেছনের রাস্তাটি ইতোমধ্যে ধসে খানা-খন্দে পরিণত হয়েছে। ধুলোবালিতে ওই এলাকার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। এছাড়া স্থানীয় আক্কাস আলী হাই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের ধুলোবালির মধ্যে আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে। আবার অনেক ট্রাক ৭ নম্বর ফেরিঘাটের নবনির্মিত রাস্তা দিয়ে আসা-যাওয়া করছে। এতে ওই রাস্তাটিও নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।

আক্কাস আলী হাই স্কুলের এক শিক্ষার্থী জানায়, প্রতিদিন স্কুলের পাশ দিয়ে শত শত ট্রাকে করে মাটি নিয়ে যাচ্ছে। তাদের ধুলোবালির মধ্যে যাওয়া-আসা করতে খুবই কষ্ট হয়। বাড়ি ফিরে প্রতিদিন স্কুলের পোশাক ধুয়ে দিতে হয়। স্কুলের পাশ দিয়ে মাটিবাহী ট্রাক বন্ধের দাবি জানায় সে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক কৃষক বলেন, চরাঞ্চলের মানুষের চলাচলের জন্য প্রয়াত ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম মন্ডল আক্কাছ আলী হাই স্কুলের পেছন দিয়ে প্রায় ৪ ফুট উঁচু করে রাস্তা করেছিলেন। কয়েক বছর ধরে চর থেকে প্রতিদিন মাটি-বালু ভর্তি গাড়ি চলাচল করায় রাস্তাটি অনেক দেবে গেছে। ধসে গিয়ে খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে এখন রাস্তাটি দিয়ে চলাচল করাই মুশকিল হয়ে পড়েছে।

Rajbari-3

অবৈধভাবে পদ্মা নদীর পাড় ও চর থেকে মাটি-বালু কেটে বিক্রির অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রিপন বলেন, ‘আমরা চর থেকে মাটি কাটছি, তাছাড়া এই জমিগুলো আমাদের।’

প্রশাসনের কাছ থেকে মাটি ও বালু তোলার অনুমোদন নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনও অনুমোদন নেওয়া হয়নি।’

এ বিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আশরাফুর রহমান বলেন, ‘চরের নদীর পাড় থেকে মাটি কেটে নেওয়ার বিষয়ে কাউকে কোন অনুমতি দেওয়া হয়নি। আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করলেও কতিপয় কিছু লোক বারবার মাটি ও বালু কেটে বিক্রি করছে। আমরা তাদের নজরদারি মধ্যে রেখেছি। এছাড়া অসাধু চক্র আর যাতে অবৈধভাবে যাতে মাটি-বালু কাটতে না পারে, সেদিকে নজরে রেখেছি।’