স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের ঢল

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) সকাল পৌনে ৭টায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিভিন্ন দল ও সংগঠনের পক্ষ থেকে শহীদ বেদিতে ফুল দেওয়া শুরু হয়। বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে মানুষের ঢাল নামে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে।

সরেজমিন দেখা গেছে, বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের ঢল নেমেছে। বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হচ্ছে। কারও হাত লাল-সবুজ পতাকা, কারও হাতে ফুল। কেউ আবার মুখে পতাকা এঁকেছেন। পরিবার-পরিজন নিয়ে স্মৃতিসৌধে এসেছেন অনেকে।

বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন

সকাল পৌনে ৭টার দিকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ প্রথমে স্মৃতিসৌধের বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। এসময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি সুসজ্জিত দল তখন রাষ্ট্রীয় সালাম জানায়। এসময় বিউগলে করুণ সুর বাজানো হয়।

পরে একে একে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও কূটনীতিক, সরকারের পদস্থ সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী স্মৃতিসৌধ এলাকা ত্যাগ করার পর জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয় মূল ফটক। সারিবদ্ধভাবে একে একে শ্রদ্ধা জানাতে থাকেন রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্মৃতিসৌধ এলাকা পরিণত হয় জনসমুদ্রে। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ।

বীর শহীদদের শ্রদ্ধা জানাতে সন্তানদের নিয়ে এসেছেন অনেকে

স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের শ্রদ্ধা নিবেদন করতে ঢাকার জুরাইন থেকে এসেছেন ওমর ফারুক। তিনি বলেন, ‘বছরের অন্যান্য সময়ে স্মৃতিসৌধে আসা হয় না। তাই দুই মেয়ে ও এক ভাগনেকে নিয়ে বিজয় দিবস উপলক্ষে স্মৃতিসৌধে এসেছি। ছেলেমেয়েদের শহীদদের ত্যাগের মহিমার বিষয়টি উপলব্ধি করানোর জন্য এখানে নিয়ে আসা।

ওমর ফারুকের বড় মেয়ে স্কুলছাত্রী বিভা জানায়, সে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার শখ আঁকাআঁকি। ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে মুক্তিযুদ্ধের একটি ছবিও এঁকেছেন। তবে বইয়ের পাতায় স্মৃতিসৌধে বা মুক্তিযোদ্ধাদের কথা জানলেও কখনও স্মৃতিসৌধে আসা হয়নি। তাই এবার বাবার সঙ্গে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে এসেছে।

মানিকগঞ্জ থেকে আসা কলেজছাত্র ফাহিম ও রাকিব বলেন, ‘বিজয়ের এই গৌরবের দিনটি উদযাপন করার জন্য প্রতি বছরই স্মৃতিসৌধে আসি। এবারও এসেছি।’