‘সবাই সরকারি চাকরি চায়, কারণ কাজ করবে না শুধু বেতন নেবে’

এখন সবাই সরকারি চাকরি চায়, কারণ কাজ করা লাগবে না, হাজিরা দিয়ে শুধু বেতন নেবে—এটা আমাদের বড় রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।

তিনি বলেছেন, ‘আমি সরকারের কাছে আবেদন করেছিলাম বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে যদি মানসম্মত বঙ্গবন্ধু গবেষণা ইনস্টিটিউট করা যায় তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় আরও পূর্ণতা পাবে। এখন মনে হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর নামে যদি একটি ইনস্টিটিউট না হয়, অথবা গবেষণা ইনস্টিটিউট না হয় তাহলে আমাদের চিন্তার দীনতা প্রকাশ পাবে। আমার প্রত্যাশা থাকবে সেরকম ব্যবস্থা সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হবে। অবশ্যই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখবে বলে আশা রাখছি।’

মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ক্যাম্পাসে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ২২৫৭টি কলেজ এবং ইনস্টিটিউট আছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এর মধ্যে সরকারি ৫৫৫, বেসরকারি ১৩৬১ এবং ইনস্টিটিউট আছে ৩৪১টি। তাহলে তাদের ব্যবস্থাপনা কতটা বিশাল তা আমাদের বুঝতে হবে। আগে ১০টি কলেজ ছিল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এসব কলেজ নিয়ন্ত্রণ করতো। একটি বিশ্ববিদ্যালয় তাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষাদান করবে—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু উচ্চশিক্ষা সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিচালনার জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যদিও ঢাকা শহরে এখনও সাতটি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আওতাভুক্ত। তবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট নেই। তারা সময়মতো ফল প্রকাশ করে। সবকিছু সময়মতোই হচ্ছে।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় যে উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠা হয়েছে সেটি বাস্তবায়নে সক্ষমতা যদি না থাকে তাহলে সফল হবে কীভাবে প্রশ্ন রেখে আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ‘ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠছে কলেজ। কত যে কলেজ হচ্ছে তার হিসাব নেই। অথচ এখন কারিগরি শিক্ষা, ভোকেশনাল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা উচিত। সাধারণ শিক্ষার মাধ্যমে এক অর্থে বেকার তৈরির কারখানা বানাচ্ছি। ইউনিয়নে কয়টা কলেজ করা যায় তা নিয়ে প্রতিযোগিতা চলে। অথচ মানসম্মত শিক্ষক নেই। কার্যক্রম শুরুর কিছুদিন পরই অনুমোদন দিতে হয়। তারপর একসময় এমপিওভুক্ত হয়ে যাবে। সবাই এর পেছনে ছুটছে।’ 

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রেখেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক

একজন পিয়নের চাকরির জন্য বিজ্ঞপ্তি দিলে দেখা যায় এর মধ্যে ৮০ শতাংশ আবেদনকারী মাস্টার্স পাস উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘সবাই মনে করে একটা সার্টিফিকেট হলেই সরকারি চাকরি হয়ে যাবে। সরকারি ছাড়া কোনও চাকরিকে আমরা চাকরি মনে করি না। এটা আমাদের জাতিগত ধারণা। কেউ চাকরি চেয়ে অনুরোধ করলে যদি বলি আমার এলাকায় অনেক প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান রয়েছে, ওসব প্রতিষ্ঠানে দিয়ে দিই। তখন বলে না, অন্তত ধান গবেষণা কিংবা কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের শ্রমিকের চাকরি দেন। পরে খোঁজ নিয়ে জানলাম কেন? কোনও কাজ করতে হবে না। ওসব প্রতিষ্ঠানের শ্রমিক হলে হাজিরা দিলেই চলবে, ঠিকমতো বেতন পেয়ে যাবে। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকরি নিলে ঠিকমতো কাজ করতে হবে। প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান বেশি বেতন দেবে তবু সে চাকরি করতে চায় না। সরকারি প্রতিষ্ঠানে কম বেতন হলেও চলবে, কারণ কাজ করতে হবে না। আমরা কাজ করবো না, শুধু বেতন নেবো—এটা আমাদের বড় রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

যুবকরা উদ্যোক্তা হতে চায় না, শুধু সরকারি চাকরি চায় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবার যুবকদের উদ্যোক্তা হওয়ার কথা বলেছেন। অথচ যুবকরা উদ্যোক্তা হতে চায় না, চাকরি চায়, তাও সরকারি চাকরি। সরকারি চাকরি করা, লেখাপড়া না করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সার্টিফিকেট সংগ্রহ করার প্রবণতা বেড়ে গেছে আমাদের। এটি জাতির জন্য অ্যালার্মিং। ২৪ লাখ শিক্ষার্থী জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে আছে। শিক্ষার গুণগত মান তারা যাতে রক্ষা করতে পারে সে হিসেবে তাদের গড়তে হবে। শিক্ষাক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের জন্য নতুন শিক্ষানীতি হয়েছে। তা বাস্তবায়নে গুরুত্বের সঙ্গে সবাই দায়িত্ব পালন করবেন—বলে প্রত্যাশা রাখছি।’

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন—আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য সিমিন হোসেন রিমি এমপি, মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি এমপি, শামসুন্নাহার ভূঁইয়া এমপি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক নিজাম উদ্দিন, প্রো ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন) ড. নাসিম বানু, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. হাবিবুর রহমান প্রমুখ।