গাজীপুরে শিশু সন্তানের বিনিময়ে ঋণের টাকা পরিশোধ করেছেন এক মা। তবে তিন দিন পর সন্তানের জন্য ব্যাকুল হয়ে পুলিশের কাছে গেলে আইনশৃঙ্খলার এই বাহিনী সেই টাকা পরিশোধ করে সন্তানকে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দিয়েছে। মানবিক ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুর মহানগরের টঙ্গীর পূর্ব থানাধীন আরিচপুর এলাকার জনৈক আইনুদ্দিনের ভাড়া বাড়িতে।
শিশুর মা লিমা হনুফা জানান, পাঁচ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু হয়ে পড়েন স্বামী মাসুম। এক মেয়ে, দুই ছেলে ও স্বামীকে নিয়ে পাঁচ জনের পরিবার তার। তিনি মানুষের বাসায় আয়া হিসেবে কাজ করেন। শিশু জন্ম নেওয়ার পর কোনও কাজ করতে পারছিলেন না। তার স্বামী পঙ্গু হওয়ায় তাকে কেউ কাজে নিচ্ছিল না। ভাড়া বাড়িতে তিন মাসের ১২ হাজার টাকা ঘর ভাড়া, দোকানে বাকি ১০ হাজার ও ওষুধের দোকানে আট হাজার টাকা দেনা হন। পাওনাদারেরা টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন। এ অবস্থায় পার্শ্ববর্তী ভাড়াটিয়া দম্পতির কাছ থেকে শিশু সন্তানের বিনিময়ে ৩০ হাজার টাকা নেন। ওই টাকা দিয়ে তিনি ঋণ পরিশোধ করেন।
তিনি আরও বলেন, টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি আশরাফুল ইসলামকে জানালে তিনি ওই ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করে সন্তানকে ফিরিয়ে দেন। একই সঙ্গে আমার স্বামীকে একটি কারখানায় কাজের ব্যবস্থা করে দিয়ে সন্তানদের লেখাপড়ার দায়িত্ব নেন।
টঙ্গীর পূর্ব থানার এসআই ইয়াসিন আরাফাত বলেন, সোমবার বিকালে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে প্রায় দুই মাস বয়সী শিশু সন্তানকে এক নারীর কাছে বিক্রি করে দেন লিমা হনুফা। কিন্তু দুই দিন না যেতেই সন্তানকে পেতে স্থানীয়দের বিষয়টি জানান। তারা জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ কল করেন। পরে ঢাকা জেলার দোহার থানার লারিসা গ্রামের কাশেম-স্বর্ণা দম্পতির কাছ থেকে শিশুটিকে ফিরিয়ে আনা হয়।
শিশুটিকে কিনে নেওয়া স্বর্ণা আক্তার বলেন, তারা নিঃসন্তান। তাই লালন-পালনের জন্য শিশুটিকে ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে নিয়েছিলেন। পরে পুলিশের নির্দেশেই তারা শিশুটিকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেন।
স্বামীকে চাকরি দেওয়া প্রতিষ্ঠান হক গ্রুপের মানবসম্পদ (এইচআর) শাখার কর্মকর্তা হযরত আলী ঈশান বলেন, টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি বিষয়টি জানিয়েছেন। শিশুর বাবা মাসুমকে কারখানায় কাজের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।
টঙ্গী পূর্ব থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম বলেন, ঋণ পরিশোধ করতেই শিশু সন্তানকে টাকার জন্য আরেক নারীর কাছে বিক্রয় দেন লিমা হনুফা। পরে ৩০ হাজার টাকা দিয়েই শিশুটিকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। টঙ্গীর হক গ্রুপের একটি কারখানায় বাবা মাসুমকে চাকরির ব্যবস্থা ও দুই সন্তানের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।