রেস্তোরাঁ ম্যানেজারকে গুলি করে হত্যা: শপিং কমপ্লেক্সের সামনে লাশ রেখে বিক্ষোভ

নারায়ণগঞ্জ শহরের ‘সুলতান ভাই কাচ্চি’ রেস্তোরাঁর ম্যানেজার শফিউল আলম কাজলকে (৫০) গুলি করে হত্যার ঘটনায় বিক্ষোভ করেছেন স্বজন ও সহকর্মীরা। মঙ্গলবার (০৭ ফেব্রুয়ারি) বিকালে শহরের চাষাঢ়ার আঙ্গুরা শপিং কমপ্লেক্সের সামনে লাশ রেখে বিক্ষোভ করেছেন তারা। 

এ সময় হত্যায় অভিযুক্ত আজহার তালুকদার ও তার ছেলে আরিফ তালুকদারের ফাঁসির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন বিক্ষোভকারীরা। সেইসঙ্গে ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন তারা।

বিক্ষোভ শেষে আঙ্গুরা শপিং কমপ্লেক্সের সামনে লাশ রেখে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে রেস্তোরাঁর কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, ‌‘অপরাধীদের ফাঁসি চাই। অস্ত্র কাকে দেওয়া হয়, সে অস্ত্র বহনের যোগ্য কিনা, তা দেখে প্রশাসনের লাইসেন্স দেওয়া উচিত ছিল। আমরা হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।’

এদিকে, সন্ধ্যায় চাষাঢ়া বাগে জান্নাত মসজিদ প্রাঙ্গণে শফিউল আলম কাজলের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রাত ৭টার দিকে বন্দরের কুশিয়ারা এলাকায় দ্বিতীয় জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।

এ ঘটনায় গ্রেফতার আজহার তালুকদার ও তার ছেলে আরিফ তালুকদারের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কাওসার আলমের আদালত তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আজহার তালুকদার চাষাঢ়ার আঙ্গুরা শপিং কমপ্লেক্সের মালিক। 

নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক আসাদুজ্জামান বলেন, ‘শফিউল আলম কাজলকে যে অস্ত্র দিয়ে গুলি করা হয়েছে, সেটি বৈধ। কেন গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তার রহস্য উদঘাটনে তিন দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। পরে দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।’

কেন গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তা জানতে আসামিদের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) চাউলাউ মারমা। তিনি বলেন, ‘কাজলের সঙ্গে কোনও বিরোধ ছিল না আজহার তালুকদারের। তবে রেস্তোরাঁর মালিক শুক্কুর আলীর সঙ্গে বিরোধ ছিল। গত কয়েকদিন ধরে বিদ্যুৎ ও পানির বিল নিয়ে শপিং কমপ্লেক্সের মালিক আজহারের সঙ্গে রেস্তোরাঁর মালিক শুক্কুর আলীর বিরোধ চলছিল। ওই বিলের টাকা নিয়ে কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে গুলি করা হয়। এখনও ঘটনার তদন্ত চলছে। আশা করছি, রিমান্ডে সব তথ্য পাওয়া যাবে।’

নিহত শফিউল আলম কাজল

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আজহার তালুকদারের আঙ্গুরা শপিং কমপ্লেক্সের নিচতলা ও দোতলার একাংশ ভাড়া নিয়ে ‘সুলতান ভাই কাচ্চি’ রেস্তোরাঁ দিয়েছেন শুক্কুর আলী। গত কয়েকদিন ধরে বিদ্যুৎ ও পানির বিল নিয়ে আজহারের সঙ্গে শুক্কুর আলীর বিরোধ চলছিল। বিল নিয়ে গত রবিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রেস্তোরাঁর ম্যানেজার কাজলের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় আজহারের। একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে শপিং কমপ্লেক্সের বাসা থেকে পিস্তল নিয়ে এসে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়েন আজহার। এতে কাজল গুলিবিদ্ধ হন। সেইসঙ্গে আরও দুজন আহত হন। কাজলকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই রাতেই আজহার তালুকদার ও তার ছেলে আরিফ তালুকদারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেইসঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন রেস্তোরাঁর মালিক শুক্কুর আলী। 

এরই মধ্যে সোমবার রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কাজলের মৃত্যু হয়। নিহত কাজল নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার আলীরটেক ইউনিয়নের শাহ আলমের ছেলে। তিনি বন্দরের নবীগঞ্জ এলাকায় বসবাস করতেন। 

নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আনিচুর রহমান বলেন, ‘রেস্তোরাঁর ম্যানেজারকে গুলির ঘটনায় শপিং কমপ্লেক্সের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন রেস্তোরাঁর মালিক শুক্কুর আলী। সেটি হত্যা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। দুই আসামিকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।’