মহাসড়কের পাশের ৫৪১ গাছ কাটলো কারা?

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে লাগানো ৫৪১টি গাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) বিকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত এসব গাছ কাটা হয়। কেটে ফেলা গাছ কৃষিজমি দিয়ে টেনে নেওয়ায় ফসলেরও ক্ষতি হয়েছে।

বন কর্মকর্তাদের অভিযোগ, মহাসড়কের পাশে হেরিং বোন বন্ড (এইচবিবি) প্রকল্পের আওতায় রাস্তা তৈরির খননকাজে নিয়োজিত এক্সক্যাভেটর চালকের নির্দেশে স্থানীয়রা এসব গাছ কেটেছেন। তবে এ ধরনের কোনও নির্দেশনা দেওয়া হয়নি বলে দাবি করেছে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ।

গোয়ালন্দ উপজেলার বন কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান খান বলেন, ‘মঙ্গলবার রাতে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের উপকারভোগী সমিতির লোকজনের কাছ থেকে গাছ কাটার কথা জানতে পারি। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে প্রায় দেড় কিলোমিটারে গাছ কেটেছে দুর্বৃত্তরা। স্থানীয়দের কাছ থেকে জানতে পারি মহাসড়কের পূর্বপাশে সওজ এইচবিবির কাজ করতে এক্সক্যাভেটর দিয়ে মাটি খনন করছে। এক্সক্যাভেটর চালক স্থানীয় লোকজনকে রাস্তা সম্প্রসারণের কাজ হবে বলে গাছ কাটতে বলেছেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে রেললাইনের পাশে বসবাসরত লোকজন গাছ কেটে নিয়ে যান।’

সামাজিক বনায়ন প্রকল্প বাগানের সভাপতি আব্দুল আহাদ বলেন, ‘২০১৮-২০১৯ অর্থবছরে সামাজিক বনায়ন প্রকল্পের বৃক্ষরোপণ তহবিল থেকে মহাসড়কের দেড় কিলোমিটারের দুই পাশে প্রায় ৪ হাজার চারা লাগানো হয়। ছোট-বড় মিলিয়ে ৫৪১টি গাছ কাটা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’ 

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, মহাসড়কের পাশের ওই অংশের গাছ গোড়া থেকে কাটা। বন বিভাগের লোকজন কাটা গাছ দেখছেন। সড়কের পাশে ক্ষেতের ভেতর দিয়ে গাছপালা টেনে নেওয়া হয়েছে। এতে ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। 

স্থানীয় কৃষক নেয়ামত শেখ অভিযোগ করে বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকালেও ক্ষেত ভালো দেখেছি। সকালে এসে দেখি ফসল নষ্ট। জমির ওপর দিয়ে গাছ টেনে নেওয়ায় এমন হয়েছে।’

বন বিভাগের রাজবাড়ী জেলা রেঞ্জার হাবিবুজ্জামান বলেন, ‘গোয়ালন্দের ফরেস্টারকে তদন্ত করে মামলা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জেনেছি সওজের রাস্তার কাজে নিয়োজিত এক্সক্যাভেটর চালকের নির্দেশে স্থানীয়রা গাছ কেটেছে। বিষয়টি সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীকে জানিয়েছি।’

এদিকে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নওজিস রহমান বলেন, ‘মহাসড়কের পাশে পায়ে চলার রাস্তার নির্মাণকাজ চলছে। গাছগুলো সড়কের ঢালুতে। এ কাজের সঙ্গে গাছ কাটার কোনও সম্পর্ক নেই। গাছ কাটার প্রয়োজন হলে বন বিভাগকে চিঠি দিয়ে জানাতাম। বন বিভাগের জেলা রেঞ্জার রাতেই আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তৃতীয় কোনও পক্ষ এ ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা তাকে খতিয়ে দেখতে বলেছি। তারপরও এক্সক্যাভেটর চালক জড়িত থাকলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, ‘মহাসড়কের পাশ থেকে রাতের মধ্যে এতগুলো গাছ কেটে ফেলা বড় ধরনের অপরাধ। জড়িতদের বিরুদ্ধে বন বিভাগকে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।’