প্রধান শিক্ষককে মারধর, ছাত্রলীগ নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার

মানিকগঞ্জের হরিরামপুরে প্রধান শিক্ষককে মারধরের ঘটনায় ধূলশুড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানজিদ মাহমুদ ইসলামকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। একইসঙ্গে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা ছাত্রলীগ।

শুক্রবার রাতে তাকে বহিষ্কার করা হয়। শনিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাজিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জেলা ছাত্রলীগের জরুরি সভায় তাকে সাময়িক বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ সংক্রান্ত প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি আমরা।’

গণমাধ্যমে পাঠানো জেলা ছাত্রলীগের প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘দলীয় আদর্শ ও সংগঠনবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে তানজিদ মাহমুদ ইসলামকে ধূলশুড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হলো। একইসঙ্গে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অধিকতর তদন্তের জন্য দুই সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। হরিরামপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি লুৎফর রহমানকে প্রধান ও সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান ফিরোজকে আহ্বায়ক করে এ কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।’

গত বৃহস্পতিবার উপজেলার ইব্রাহিমপুর ঈশ্বরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেনকে (৫৩) মারধর করেন তানজিদ মাহমুদ। এ ঘটনায় শুক্রবার থানায় মামলা করেন ভুক্তভোগী শিক্ষক।

এদিকে, ঘটনার তিন দিনেও তানজিদ মাহমুদকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধান শিক্ষক।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের নামে প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেনের কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিলেন তানজিদ মাহমুদ। টাকা দিতে অস্বীকার করলে প্রধান শিক্ষকের ওপর ক্ষিপ্ত হন তিনি।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টার দিকে মোটরসাইকেলে বিদ্যালয়ের কম্পিউটার অপারেটর শুভ্র দত্তকে নিয়ে প্রধান শিক্ষক উপজেলা সদরে অগ্রণী ব্যাংকে যাচ্ছিলেন। মোহনপুর এলাকায় মোটরসাইকেলের সামনে এসে গতিরোধ করেন তানজিদ ও তার সহযোগীরা। পরে প্রধান শিক্ষককে মারধর ও লাঠি দিয়ে পেটান। প্রধান শিক্ষককে রক্ষা করতে গেলে কম্পিউটার অপারেটর শুভ্র দত্তকেও মারধর করা হয়। এ সময় শিক্ষকের পাঞ্জাবির পকেট থেকে পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা, হাতঘড়ি ও মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে চলে যান তারা। পরে স্থানীয় লোকজন তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।

প্রধান শিক্ষক আলতাফ হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন সময় অনুষ্ঠানের নামে আমার কাছে চাঁদা দাবি করে আসছিল তানজিদ। এ ছাড়া বিদ্যালয়ের সীমানাপ্রাচীরের বাইরে ঝালমুড়ি বিক্রেতাদের বসতে দিতে বলেছিল। এসবে রাজি না হওয়ায় ক্ষিপ্ত ছিল তানজিদ ও তার সহযোগীরা। এসবের জের ধরে আমাকে মারধর করা হয়েছে। ঘটনার তিন দিনে তাকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’
 
এ বিষয়ে হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন কুমার আদিত্য বলেন, ‘শিক্ষকের ওপর হামলার ঘটনায় তানজিদ মাহমুদসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এ মামলায় মো. নয়ন নামে এজাহারভুক্ত এক আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’

জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এম এ সিফাত কুরাইশী বলেন, ‘তাকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’