‘কখনও পোলাডারে ভালো একটা জামা কিনে দিতে পারিনি, আইজ পুলিশের চাকরি পাইছে'

‘ও যখন এসএসসি পরীক্ষা দেবে তখন ওর বাবা মারা যায়। পরে বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ওকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে। এসএসসি পাসের পর বাপ আমার মাদারীপুর শহরের একটি অফিসে চার হাজার টাকা বেতনে কাজ পায়। শহরের কাছে একটি কলেজে পড়ে এইচএসসি পাস করে। চাকরির সামান্য বেতন দিয়ে নিজের পড়াশোনা আর পরিবারডা চালাতো। কখনও তারে ভালো একটা জামা কিনে দিতে পারি নাই। আইজ ও পুলিশে চাকরি পাইছে, আমরা সবাই খুব খুশি।’ 

কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশ পুলিশ কনস্টেবল পদে নিয়োগ পাওয়া মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার সন্যাসীর চর ইউনিয়নের দৌলতপুর এলাকার শুভ গিরির মা সনেকা রানী।

শুভ এবার বাংলাদেশ পুলিশের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। তার বাবা মৃত সুভাষ চন্দ্র গিরি। দুই ভাই বোনের মধ্যে শুভ ছোট। সে এ বছর মাদারীপুর সদর উপজেলার খোয়াজপুর সৈয়দ আবুল হোসেন কলেজ থেকে বিজ্ঞান বিভাগে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাশ করেছে।

শুভর ভাষ্য, ‘বাবা মারা যাওয়ার পর পুরো সংসারের দায়িত্ব আমার কাঁধে এসে পড়ে। ইচ্ছে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবো। সংসার টিকিয়ে রাখার জন্য একটা চাকরির ভীষণ দরকার ছিল। কিন্তু ঘুষ ছাড়া সামান্য ১২০ টাকায় চাকরি পাবো, তা কখনও কল্পনাও করিনি। আমার এখন পুলিশে চাকরি হয়েছে, পরিবার নিয়ে আর কষ্ট করতে হবে না। আমার ইচ্ছে চাকরির পাশাপাশি যদি সুযোগ পাই পড়াশোনা চালিয়ে যাবো।’

সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাত ১০টার দিকে মাদারীপুর জেলা পুলিশ লাইনসের ড্রিল শেড মিলনায়তনে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম পুলিশ নিয়োগ পরীক্ষায় চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করেন। এ সময় মনোনীত প্রার্থীদের মাদারীপুর জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানানো হয়।

মাদারীপুর জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সরকার ঘোষিত ২০২৩ সালের ট্রেইনি রিক্রুট কনস্টেবল (টিআরসি) পরীক্ষায় জেলা থেকে মাত্র ১২০ টাকা ফি দিয়ে ৪৫টি পদের বিপরীতে ১ হাজার ১৪৮ জন অনলাইনে আবেদন করেন। পরবর্তীতে সেখান থেকে ১ হাজার ২৩ জন চাকরি প্রত্যাশীকে নিয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি যাত্রা শুরু হয়। পরে ১৮ তারিখে লিখিত ও ২৭ তারিখে মৌখিক পরীক্ষা শেষে মেধা তালিকা অনুযায়ী বিভিন্ন কোটা বিভাজন করে ৩৮ জন তরুণ ও ৭ জন তরুণীকে মনোনীত করা হয়।

শিবচরের মাদবরেরচর আর এম উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘শুভ আমাদের বিদ্যালয়ের ভালো ছাত্র ছিল। এসএসসি পরীক্ষা দেবে তার কিছুদিন আগে ওর বাবা মারা যায়। আমরা সব সময় ওর খেয়াল রাখতাম। উপদেশ দিতাম। কখনও তাকে নিরাশ হতে দেইনি। কলেজে পড়তো, সেখানেও সহযোগিতা করার চেষ্টা করতাম। আজ শুভ চাকরি পেয়েছে। তাই আমরা অনেক খুশি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, ‘পুলিশের এই নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষতার মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হয়েছে। এখানে যারাই নির্বাচিত হয়েছেন নিজ যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে নির্বাচিত হয়েছেন। সরকারি ফি’র বাইরে কোনও টাকা খরচ হয়নি। যারা নিয়োগ পেয়েছেন তাদের কাছে আমাদের একটাই প্রত্যাশা, তারা যেন জনগণের সেবক ও জনগণের পুলিশ হয়।’

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নিয়োগ বোর্ডের সদস্য ও রাজবাড়ী জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সালাহউদ্দিন, শরীয়তপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ভাস্কর সাহা ও মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মনিরুজ্জামান ফকির।