গৃহবধূর মৃত্যু, স্বজনদের দাবি ‘হত্যা’

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় ফাতেমা আক্তার (৩১) নামে এক গৃহবধূ আগুনে পুড়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে মারা গেছেন। তার স্বজনদের দাবি, যৌতুকের দাবিতে ওই গৃহবধূকে এসিড দিয়ে ঝলসে দিয়ে হত্যা করেছেন স্বামী।

রবিবার (২৬ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্ল্যাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়েছে। সোমবার সন্ধ্যায় লাশ গোসল করানোর সময় সন্দেহ হলে স্বজনরা এই অভিযোগ তোলেন।

ফাতেমা আক্তার ফতুল্লার পোস্ট অফিস এলাকার মৃত মোসলেহ উদ্দিন সরদারের মেয়ে। নিহতের স্বামী আরিফ হোসেন (৩৬) ফতুল্লার লালপুর এলাকার আলী আহামদের ছেলে।

স্বজনরা দাবি করেন, ২০০৮ সালে আরিফ হোসেনকে পছন্দ করে ও ভালোবেসে বিয়ে করেন ফাতেমা। এই বিয়েতে আত্মীয়রা রাজি ছিলেন না। তাদের সংসারে ১২ বছরের এক ছেলে এবং ছয় বছরের এক মেয়ে রয়েছে। তার স্বামী নেশাগ্রস্ত। ফলে প্রায় সময় তার স্ত্রীকে নির্যাতন করতো।

ফাতেমাকে হত্যা করা হয়েছে দাবি করে নিহতের খালাতো ভাই হাসান আলী ইয়াদ বলেন, রবিবার দুপুরে আমার বোনের শাশুড়ি ফোন করে বোনের মৃত্যুর খবর জানায়। তারা জানিয়েছেন, বোন স্ট্রোক করে মারা গেছে ও তার লাশ শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্ল্যাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে রয়েছে। সেখানে গিয়ে তার লাশ দেখতে পাই। কিন্তু স্ট্রোক করে মারা গেলে তাকে বার্ন ইউনিটে কেন রাখা হবে- এই বিষয়ে আমরা বারবার প্রশ্ন করেছি। পরে আজ সন্ধ্যায় লাশ গোসল শেষে জানতে পেরেছি, তার শরীরের গলা থেকে বুক পর্যন্ত ঝলসানো। বোনকে নির্যাতন করে মারা হয়েছে। দুই মাস আগে তার স্বামী অটোরিকশা কেনার জন্য দুই লাখ টাকা যৌতুক চেয়েছিল খালার কাছে। তিনি গরিব মানুষ কোথা থেকে এত টাকা দেবে? পরে যৌতুকের টাকা না পেয়ে বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে। সন্ধ্যার পরে লাশ দাফন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন এই ঘটনায় মামলা করবো।’

নিহতের মা নাসিমা বেগম দাবি করেন, ‘আমার মেয়ে গত ৯ মার্চ থেকে শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি রয়েছে। অথচ শ্বশুরবাড়ির লোকজন আমাদের কিছু জানায়নি। আমার মেয়ে মারা যাওয়ার পর তারা জানিয়েছে। এদিকে আমার মেয়ের লাশ গোসল করানোর সময় গলা থেকে পুরা বুক পর্যন্ত ঝলসানো দেখেছি। এতে আমরা ধারণা করছি, যৌতুকের টাকা না দেওয়ায় আমার মেয়েকে এসিড দিয়ে ঝলসে দিয়েছে তার স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন। কিছুদিন আগে আমার কাছে দুই লাখ টাকা চেয়েছিল জামাতা। কিন্তু সেই টাকা দিতে পারিনি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফতুল্লা মডেল থানার ওসি মোহাম্মদ রিজাউল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘কিছুদিন আগে রান্না করতে গিয়ে ওই গৃহবধূর শরীর আগুনে পুড়ে যায়। পরে গতকাল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি স্ট্রোক করে মারা যান। এই ঘটনায় অপমৃত্যুর মামলা হবে। এই ঘটনায় অন্য রকম কিছু পাওয়া গেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’