প্রার্থিতা ফিরে পেতে চালাবেন শেষ চেষ্টা

মন্ত্রণালয় থেকে ভুয়া চিঠি দিয়ে আমাকে বরখাস্ত করে: জাহাঙ্গীর

খেলাপি ঋণের কারণে নির্বাচন কমিশনের যাচাই-বাছাইয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া সাবেক মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, ‘মন্ত্রণালয় (স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়) থেকে মিথ্যা ও ভুয়া চিঠি দিয়ে আমাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। সেটার কোনও সমাধান না করে নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করেছে। এতে কি প্রমাণিত হয় না এখানে ন্যায় বিচার পাবো কি না- এখানে নির্বাচন কমিশনার তার নিরপেক্ষতাটা রাখবে কি না এবং প্রশাসন সহযোগিতা করছে কি না নির্বাচন নিরপেক্ষ করার জন্য?’

রবিবার (৩০ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় গাজীপুর জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

একই সিটির ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে মেয়র হওয়ার পর ২০২১ সালের নভেম্বরে জাহাঙ্গীর আলমকে মেয়রের পদ থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্ত সাময়িক হলেও পরের নির্বাচন এলেও পদটি আর ফিরে পাননি তিনি। আওয়ামী লীগের দলীয় ও সদস্য পদও হারিয়েছেন।

আজই যাচাই-বাছাইয়ে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে ইসিসি। এই বিষয়ে জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি তো একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থীকে কেন ভয় পায়? সবাই বলেছে একটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনে। অন্ধকারে যে প্রার্থী বা পেশী শক্তি ব্যবহার করার জন্য চেষ্টা করছে, এটা গাজীপুরের মানুষ এক সময় মেনে নেবে না। শহরের মানুষকে একটি অনুরোধ করবো কোনও ভণ্ড, প্রতারক, মিথ্যাবাদী, অভিনেতাকে যারা ৬০/৭০ বছরে কিছু করতে পারেনি তাদেরকে যেন আর কেউ ভোট না দেয়।’

তিনি বলেন, ‘আমি মেয়র থাকাকালে মানবিক কারণে যখন দেখলাম, কোনাবাড়ী এলাকায় নিউ টাউন নিটওয়্যার কোম্পানি লিমিটেড বন্ধ করে দিয়েছে, হাজার হাজার শ্রমিকের আয়ের জায়গা বন্ধ হয়ে গেছে। তারা বেতন পাচ্ছে না। যখন মালিক পক্ষ আমার সহযোগিতা চাইলো, তখন আমার নিজের থেকে প্রায় ১২ বিঘা জায়গা অগ্রণী ব্যাংকে তাদের কোম্পানির নামে মরগেজ দিয়েছি। এই কোম্পানিতে আমার শেয়ার নেই।’

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমি নিঃস্বার্থ ও মানবিক দিক বিবেচনা করে আমার সম্পত্তি দিয়েছে। তারা যখন করোনার কারণে এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে তাদের অর্ডার নষ্ট হয়ে যায় তখন তারা কিছু দিনের জন্য ফ্যাক্টরি বন্ধ করে দেয়। তখন তারা যে বেতন দিতে পারেনি সে জন্য তাদের যে কিস্তি ছিল ব্যাংকের, সেই কিস্তি না দেওয়ার কারণে তারা ডিফল্ডার (ঋণ খেলাপি) হয়ে যায়। ডিফল্ডার হয়ে যাওয়ার পরে আমি যখন শুনতে পারলাম তখন তারা (কোরিয়ানরা) নিজেরাই অগ্রণী ব্যাংকের তাদের যে লোন আছে সেই লোন বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম অনুযায়ী সম্পূর্ণ টাকা তারা প্রক্রিয়া অনুযায়ী পরিশোধ করে। অগ্রণী ব্যাংক তাদের অর্থ পেয়েছে। সেই অর্থ পেয়ে তারা নির্বাচন কমিশনে সরাসরি এসে বলেছে আমরা তাদের টাকা পেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘সিআইভি জিরো করা হয়। সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে চিঠিও দিয়েছে। দুই পক্ষই টাকা দিয়েছে এবং তারা পেয়েছে। ব্যাংক সেখানে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। আমি তৃতীয় পক্ষের একজন মরগেজ হিসেবে আমার জমি এখানে আছে। আমি ক্ষতিগ্রস্ত, অথচ আমার জমি মুক্ত না করে দিয়ে তারা আমার নমিনেশন ফরম বাতিল করে দিয়েছে। যেখানে ২০১৬ সালের রায় আছে, যারা মরগেজ রাখে তারা কোনোভাবেই ডিফল্ডার হতে পারে না, তাদের সিআইভি নষ্ট হতে পারে না। সেই রায়টাও আমি দেখিয়েছি। সেই রায়ের বিষয়ে কর্ণপাত না করে তারা (নির্বাচন কমিশন) পক্ষপাতিত্ব করে আমার মনোনয়ন ফরম বাতিল করেছে। ১২ লাখ মানুষ যেখানে সরাসরি ভোট দিতে পারে, সেই উৎসবের মধ্যে আসছিলাম।’

সাবেক এই মেয়র বলেন, ‘২০১৩ সাল থেকে আমার ওপর নির্যাতন শুরু করেছে। ওই সময় আমি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান থেকে পদত্যাগ করেছিলাম। সেদিনও কিন্তু আমার মনোনয়ন বাতিল করেছিল। উচ্চ আদালত থেকে আমি অনুমতিও পেয়েছিলাম। ঠিক ২০১৮ সালেও আমাকে কীভাবে সরানো যায় সব ধরনের চেষ্টাই করেছিল। প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় সেই সময়ে আমি নির্বাচন করতে পেরেছিলাম। আজকে ২০২৩ সাল আমার এখানে নির্বাচনের সব প্রক্রিয়া ঠিক রয়েছে। উচ্চ আদালত বলেছিল আমার নির্বাচন করতে কোনোপ্রকার বাধা থাকবে না। কিন্তু দেখা গেছে, অন্ধকারের হাত দিয়ে আমার নির্বাচন ফরমটা বাতিল করে দিয়েছে। আমি চাচ্ছি, এটা আপিলে গিয়ে কীভাবে সমাধান করা যায় সেটা করতে। যদি না হয় তাহলে উচ্চ আদালত পর্যন্ত আমি চেষ্টা করবো। সে পর্যন্ত অপেক্ষা করবো। আমি চেষ্টা করবো সত্যের পক্ষে একটা জয় নিয়ে আসার জন্য। গাজীপুরে একটা মিথ্যার জয় হয়ে গেছে। এটা যেন কোনোভাবেই ভবিষ্যতে না হতে পারে সে জন্য সর্বোচ্চ আদালত, প্রধানমন্ত্রী, সরকারের প্রধান, দলীয় প্রধান এবং আমাদের সুপ্রিম কোর্ট সবার কাছে আমি সহযোগিতা চাই।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি এবং আমার মা-ও নমিনেশন ফরম নিয়েছেন। আমার মা-ও সহযোগিতা চাইবে আমি তাকে সহযোগিতা করবো। আমি আবারও বলছি এবং এখনও বলছি, আমি সর্বশেষ চেষ্টা করবো এ নগরবাসীকে একটা স্বস্তি দেওয়ার জন্য। নগরবাসী আমাকে যে সহযোগিতা করছে তাদেরকে আমি আন্তরিকভাবে শুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। নগরের মানুষের শক্তি আগামী দিনে আমার ভোটের জন্য শক্তি হবে। কোনও ধরনের পেশী শক্তি অন্যায় কিছু যেন এখানে না করতে পারে গাজীপুরের প্রত্যেকটি ভোটার এবং নাগরিকদের অনুরোধ রাখবো। আপনারা দিনরাত পাহারা দিন। আপনাদের শহর রক্ষা করবেন। সৎ এবং আদর্শ মানুষকে ভোট দেবেন যারা আপনাদের সঙ্গে প্রতারণা করবে না।’