অজ্ঞাত লাশ নিজের মেয়ের বলে দাফন, ৪ দিন পর জীবিত উদ্ধার

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলায় ‘দাফনের’ চার দিন পর হাসি বেগম নামে এক গৃহবধূকে জীবিত উদ্ধার করেছে পুলিশ। সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) ময়মনসিংহের নান্দাইল থেকে তাকে উদ্ধার করা হয়।

মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন সদরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মামুন আল রশিদ। হাসি বেগম (২৪) সদরপুর উপজেলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের শৌলডুবী গ্রামের হাবিবুর রহমানের মেয়ে এবং একই উপজেলার চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বড় বাড়ির মোতালেব শেখের স্ত্রী। 

পুলিশ জানায়, বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার কথা বলে শ্বশুরবাড়ি থেকে গত ৭ সেপ্টেম্বর নিখোঁজ হয়েছিলেন গৃহবধূ হাসি বেগম। নিখোঁজের পর তার বাবা অভিযোগ করেন, শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেয়েকে হত্যা করে লাশ গুম করেছেন। এরই মধ্যে ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সদরপুর উপজেলা সংলগ্ন ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের আদমপুর এলাকার নাউটানা এলাকায় কচুরিপানার ভেতর থেকে এক নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশটি নিখোঁজ হাসির বলে শনাক্ত করেন তার মা সালমা বেগম। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন ২১ সেপ্টেম্বর শৌলডুবী মদিনাতুল কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়। লাশ দাফনের দুই দিন পর মা-বাবাকে ফোন করে জীবিত থাকার কথা জানান হাসি। সোমবার নান্দাইল থেকে হাসিকে জীবিত উদ্ধার করে সদরপুর থানা পুলিশ।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, আট বছর আগে একই উপজেলার চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বড় বাড়ির মৃত শাহআলম শেখের ছেলে মোতালেব শেখের (৪৫) সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় হাসি বেগমের। তাদের হুসাইন নামের সাত বছরের একটি ছেলেসন্তান রয়েছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর হাসি বেগম তার শশুরবাড়ি থেকে বিদ্যুৎ বিল দেওয়ার কথা বলে সদরপুরের উদ্দেশে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় তার বাবা শেখ হাবিবুর রহমান গত ১১ সেপ্টেম্বর সদরপুর থানায় একটি অভিযোগ দেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, তার মেয়ে হাসিকে হত্যা করে লাশ গুম করেছে জামাতা মোতালেব শেখ। 

অপরদিকে, দুই দিন পর ১৪ সেপ্টেম্বর হাসির স্বামী সদরপুর থানায় পাল্টা অভিযোগ করেন। অভিযোগে উল্লেখ করেন, তার স্ত্রী হাসি বেগম নগদ টাকাসহ প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে পালিয়ে গেছে।

অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ চলা অবস্থায় ২০ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় সদরপুর উপজেলা সংলগ্ন ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের আদমপুর এলাকার নাউটানা এলাকায় কচুরিপানার ভেতর থেকে এক নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। লাশটি নিখোঁজ হাসির বলে শনাক্ত করেন তার মা সালমা বেগম। ময়নাতদন্ত শেষে পরদিন লাশ দাফন করা হয়। দাফনের দুই দিন পর মা-বাবাকে ফোন করে জীবিত থাকার কথা জানান হাসি। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়। তবে দাফন করা লাশটি কার? এ বিষয়ে কিছু জানাতে পারেনি পুলিশ।

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার গফফার শিকদার বলেন, এর আগে জানতে পারি, নিখোঁজের পর হাসি বেগমের লাশ পাওয়া গেছে এবং পরবর্তীতে তার পরিবারের লোকজন দাফনও করেছিল। হঠাৎ আবার জানতে পারলাম, হাসি মারা যায়নি; জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

সদরপুর থানা ওসি মো. মামুন আল রশিদ বলেন, ‌‘হাসি বেগমকে নান্দাইল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বর্তমানে তিনি থানায় আছেন। জিজ্ঞাসাবাদে জানতে পারলাম, হাসি একজনের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছিলেন। তার মা-বাবা লাশটি শনাক্ত করতে ভুল করেছিলেন। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে দাফনকৃত লাশটি কার সে বিষয়ে এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’