আওয়ামী লীগের ফরিদপুরের কেন্দ্রীয় দুই প্রেসিডিয়াম সদস্যের বিরুদ্ধে কমিটি বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগ তুলেছেন দলের একটি পক্ষ। সম্প্রতি ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। এর প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ তোলেন অপর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মনির।
কেন্দ্রীয় দুই প্রেসিডিয়াম সদস্যের নাম হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন ফরিদপুরের সাবেক দুই সংসদ সদস্য আব্দুর রহমান ও কাজী জাফরুল্লাহ। তবে পৌর আওয়ামী লীগের নতুন আহ্বায়ক কমিটি নিয়ে এই দুই প্রেসিডিয়াম সদস্য কিছুই জানেন না বলে এই প্রতিবেদককে জানিয়েছেন।
বুধবার (২৭ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় ফরিদপুর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন পৌর আওয়ামী লীগের আগের কমিটি। এ সময় এই পক্ষের আহ্বায়ক মনিরুল হাসান মিঠু ও দুই যুগ্ম আহ্বায়ক উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার (২৫ সেপ্টেম্বর) আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য মির্জা আজমের স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে দেখা যায়, ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে জেলা যুবলীগের সাবেক সদস্য সাইদ উদ্দিন আহমেদ সাহিদকে আহ্বায়ক করা হয়েছে এবং যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে রয়েছেন বর্তমান জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও ফরিদপুর পৌর মেয়র অমিতাভ বোস, নজরুল ইসলাম মৃধা ও নুরুল আমিন বাপ্পি। এই তিনজনকেই ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও এমপি পদে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী শামীম হকের বিভিন্ন সভা সমাবেশে দেখা যায়।
এর আগে, গত ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে আহ্বায়ক হিসেবে মনিরুল হাসান মিঠু এবং যুগ্ম আহ্বায়ক হিসেবে সাইদ উদ্দিন আহমেদ, মনিরুজ্জামান মনির ও অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান বাবুলের নাম ঘোষণা করা হয়। এ কমিটিও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সংসদ সদস্য মির্জা আজমের স্বাক্ষরিত। বর্তমানে এই কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইদ উদ্দিন আহমেদ বাদে বাকিরা সংসদ সদস্য পদে মনোনয়নপ্রত্যাশী ও জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য এ কে আজাদের বিভিন্ন সভা সমাবেশে অংশগ্রহণ করে থাকেন।
নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করায় মঙ্গলবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ফরিদপুর প্রেসক্লাব চত্বরে প্রতিবাদ সমাবেশ এবং পরে হলরুমে সংবাদ সম্মেলন করেন আগের কমিটির নেতৃবৃন্দ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মনিরুল হাসান মিঠু। তিনি বলেন, ‘একটি আহ্বায়ক কমিটি থাকতে আরেকটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন সম্পূর্ণ অগঠনতান্ত্রিক। চিঠিতে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্ত মোতাবেক কমিটি গঠনের কথা বলা হলেও আমাদের জানা মতে, গত কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় ফরিদপুর পৌর কমিটি বিষয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। চিঠিতে বলা হয়েছে, আহ্বায়ক ও যুগ্ম আহ্বায়ক পদায়ন করা হইলো। যা আমাদের বিস্মিত করেছে। আমরা অবিলম্বে উক্ত কমিটি বাতিলের দাবি জানাই।’
বিষয়টি নিয়ে ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামীম হক এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘আগের কমিটি দেওয়া হয়েছে আড়াই বছর আগে, তার মেয়াদ ছিল তিন মাস। এই সময়ের মধ্যে সম্মেলন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার কথা ছিল। আমরা গঠনতান্ত্রিকভাবে বারবার চিঠি দেওয়ার পরেও তারা করেনি। কেন্দ্র আমাদের বারবার চাপ দিচ্ছে যে, আপনারা কেন এটা করতেছেন না। পরে তাদের আবারও জানিয়েছি, কেউ কোনও কিছু করে নাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘শহরের কমিটি শক্তিশালী না থাকলে জেলা কমিটিও ঠিক থাকে না। সামনে নির্বাচনের স্বার্থে তাদের দ্বিমতেই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী আহ্বায়ক কমিটি করা হয়েছে। আমাদের সুপারিশেই করা হয়েছে। এটা সম্পূর্ণ গঠনতন্ত্র অনুযায়ীই হয়েছে। তারা অনেক কিছুই বলতে পারে। আমরা তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশও দিয়েছি। নতুন কমিটি গঠন করলে আগেরটা অটোমেটিক্যালি বাতিল হয়ে যায়।’
সংবাদ সম্মেলনে আগের কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান মনির কমিটি বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে বলেন, ‘সত্য তো একদিন না একদিন প্রকাশ করতেই হবে। ফরিদপুর হচ্ছে পদ বাণিজ্যের উৎকৃষ্ট জায়গা। ফরিদপুরের যারা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ আছেন, তারাই এর সঙ্গে জড়িত। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই মুহূর্তে দেশের বাইরে গেছেন এবং তিনি একটি বিশেষ সভায় আছেন, যেটা আমরা সবাই জানি। সেই মুহূর্তে এই কমিটি দেওয়া ফরিদপুরের কেন্দ্রীয় বাঘা বাঘা নেতার কারসাজি ছাড়া এটা কোনোদিনও সম্ভব না। এর সঙ্গে দুই জন প্রেসিডিয়াম সদস্য আছেন। তারা ফরিদপুরেরই। জনাব শ্রদ্ধেয় কাজী জাফরুল্লাহ এবং শ্রদ্ধেয় আব্দুর রহমান সাহেব।’
তিনি আরও বলেন, ‘তারা যে জড়িত তার প্রমাণ কমিটিতে দুটি নাম আছে। একটা আহ্বায়ক এবং আরেকজন শেষের যুগ্ম আহ্বায়ক। আমি চ্যালেঞ্জ করে বললাম, এই দুটি নাম তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। তা না হলে জেলা আওয়ামী লীগের একটি বিশাল পদ যুগ্ম সম্পাদক পদের লোকটিকে এই কমিটিতে দুই নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়েছে। এখানেই ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়েছে।’
এ সময় এই নেতা বলেন, ‘আমরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জেনেছি, নতুন করে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমাদের আগে কোনও নোটিশও দেওয়া হয়নি। কী কারণে এই কমিটি করা হয়েছে আমাদের জানা নেই। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে পদায়ন করা হলো। এই পদায়নের শব্দ নিয়ে আপত্তি আছে। কারণ, আমরা তো চাকরি করতে আসি নাই।’
কমিটির বাণিজ্যের অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ কিছুই জানেন না বলে জানান। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘অভিযোগের বিষয়ে আমার কিছুই বলার নাই। আমি কিছু জানিই তো না। ফরিদপুরের সঙ্গে আমার কোনও যাওয়া-আসা হয় না। ফরিদপুর পৌর আওয়ামী লীগের নতুন কোনও কমিটি হয়েছে কিনা তাও জানি না। বাণিজ্য-টাণিজ্যের ভেতরে কাজী জাফরউল্লাহ নাই। ফরিদপুরের বুড়ো থেকে শিশু সকলেই জানে আমি মনোনয়ন বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত না।’
আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুর রহমান এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘তারা নাম বললে তো আর হবে না। সংগঠনের নিয়মকানুনের মধ্যে যেটা পড়ে সেটা দলের সাধারণ সম্পাদক দলের প্রধানের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। আর পৌর কমিটির বিষয়াদি নিয়ে আমার জানা নেই।’