ডাচ বাংলার এজেন্ট ব্যাংক থেকে গ্রাহকের কোটি টাকা উধাও, ম্যানেজারের আত্মহত্যা

নরসিংদীর রায়পুরায় ডাচ বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের একটি এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার কার্যক্রম বন্ধ করে গ্রাহকের কোটি টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছেন উদ্যােক্তা শহিদুল ইসলাম লিটন। এ ঘটনায় ব্যাংকটির এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সেলস ম্যানেজার আব্দুল কাইয়ুম বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন।

ব্যাংক কর্তৃপক্ষের চাপ সইতে না পেরে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে জানিয়েছে পরিবার। বিষপানে অসুস্থ হওয়ার পর গত সোমবার (২২ জানুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। নিহতের স্ত্রী আমেনা বেগম এসব তথ্য জানিয়েছেন।

আব্দুল কাইয়ুম (৫০) রায়পুরা উপজেলার মুছাপুর ইউনিয়নের রামনগর মধ্যপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল জলিলের ছেলে। তিনি ডাচ বাংলা ব্যাংকের রায়পুরা এজেন্ট শাখার এরিয়া ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন। তার অধীনে রায়পুরায় ৩০টি আউটলেট (এজেন্ট শাখা) ছিল। অন্যদিকে এজেন্ট ব্যাংকিং শাখার পরিচালক উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম লিটনের বাড়ি একই উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে।

সেলস ম্যানেজার আব্দুল কাইয়ুম

কাইয়ুমের স্ত্রী আমেনা বেগম অভিযোগ করেন, আলগী বাজার আউটলেটের (এজেন্ট শাখা) গ্রাহকদের টাকা নিয়ে উদ্যোক্তা লিটন উধাও হয়ে যাওয়ার পর থেকেই কাইয়ুমের ওপর মানসিকভাবে চাপ সৃষ্টি করেন ব্যাংকের এক কর্মকর্তা। একপর্যায়ে গ্রাহকদের সব টাকা পরিশোধ করতে হবে বলে কাইয়ুমের কাছ থেকে জোরপূর্বক একটি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। বারবার ব্যাংক কর্তৃপক্ষের এমন চাপ সইতে না পেরে কাইয়ুম গত শনিবার (২০ জানুয়ারি) সকালে নিকটস্থ মাহমুদাবাদ বাজার থেকে একটি বিষের বোতল কিনে এনে তা পান করেন। কিছুক্ষণ পর স্বজনরা টের পেয়ে প্রথমে কাইয়ুমকে কিশোরগঞ্জের ভৈরবে একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে জহুরুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেও অবস্থার হলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় তাকে। ঢামেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (২২ জানুয়ারি) রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টায় মারা যান কাইয়ুম।

এজেন্ট ব্যাংকের ওই শাখার ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, তারা অনেকে ওই আউটলেটে টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করেছিলেন। তাদের শাখা থেকে টাকা জমার রসিদও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকের উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম লিটন গ্রাহকদের না জানিয়ে কৌশলে টাকা আত্মসাৎ করে শাখাটি তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যান। টাকাসহ লাপাত্তা হয়ে যাওয়া ব্যক্তিকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান ভুক্তভোগীরা। 

এ ব্যাপারে রায়পুরা থানার ওসি মীর মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‌‘বুধবার (২৪ জানুয়ারি) সন্ধ্যা পর্যন্ত কাইয়ুমের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ কোনও অভিযোগ দেয়নি। উদ্যোক্তা শহিদুল ইসলাম লিটন টাকা নিয়ে পলাতক থাকার ঘটনায়ও কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’