চট্টগ্রাম চান্দগাঁও র্যাব-৭ ক্যাম্পে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পলাশ সাহার (৩৭) মৃত্যুকে ঘিরে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ বলছে, পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যা করেছেন এই কর্মকর্তা। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া সুইসাইড নোট থেকেও এটাই ধারণা করা হচ্ছে।
পলাশ সাহা গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার তারাশী গ্রামের মৃত বিনয় কৃষ্ণ সাহার ছেলে।
এ প্রসঙ্গে র্যাব-৭-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) এ আর এম মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘নিহত পলাশ সাহা নগরের চান্দগাঁও র্যাব-৭ ক্যাম্পে সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে কর্মরত ছিলেন। তিনি নগরের চান্দগাঁও এলাকায় বাসা নিয়ে থাকতেন। বাসায় তার মা ও স্ত্রী সঙ্গে থাকেন বলে আমরা জেনেছি। কেন তিনি আত্মহত্যা করেছেন তা এখনও নিশ্চিত হতে পারিনি।’
তবে নামে প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, পলাশের স্ত্রী সুস্মিতা সাহা ও মা আরতি সাহা পলাশের সঙ্গে চট্টগ্রামের বাসায় থাকতেন। তবে পলাশের স্ত্রী মেনে নিতে পারেননি তার মা তাদের সঙ্গে থাকাটা। এ জন্য তাদের মধ্যে প্রায় সময় ঝগড়া হতো। বুধবার সকালেও স্ত্রীর সঙ্গে মা ও পলাশের ঝগড়া হয়। ঝগড়ার পর পলাশ সাহা কর্মস্থল র্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পে চলে আসেন। সেখানে নিজ অফিসের চেয়ারে বসে নিজের নামে অস্ত্র ইস্যু করা অস্ত্র দিয়ে মাথায় গুলি করে আত্মহত্যা করেন। মৃত্যুর আগে লিখে গেছেন একটি সুইসাইড নোট।’
‘চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) উপপুলিশ কমিশনার আমিরুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পলাশ সাহা পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যা করেছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার হওয়া সুইসাইড নোট থেকেও এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে। চট্টগ্রামের বাসায় স্ত্রী এবং মা থাকতো। তবে আমরা পরিবারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলতে পারিনি। এ ঘটনায় চান্দগাঁও থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা করা হবে।’
বুধবার (৭ মে) র্যাব-৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্পের তৃতীয় তলার নিজ কক্ষ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এই সময় তার কক্ষ থেকে একটি চিরকুটও উদ্ধার করা হয়েছে।
চিরকুটে লেখা, ‘আমার মৃত্যুর জন্য মা এবং বউ কেউ দায়ী না; আমিই দায়ী। কাউকে ভালো রাখতে পারলাম না। বউ যেন সব স্বর্ণ নিয়ে যায় এবং ভালো থাকে। মায়ের দায়িত্ব দুই ভাইয়ের ওপর। তারা যেন মাকে ভালো রাখে। স্বর্ণ বাদে যা আছে তা মায়ের জন্য। দিদি যেন কো-অর্ডিনেট করে।’
এ প্রসঙ্গে র্যাব-৭-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) এ আর এম মোজাফফর হোসেন বলেন, ‘র্যাব-৭ চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট ক্যাম্পে কর্মরত সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পলাশ সাহা অভিযানের প্রস্তুতি গ্রহণকালে তিনি অস্ত্র ইস্যু করে নিজের অফিস রুমে প্রবেশ করেন। তার কিছুক্ষণ পর একটি শব্দ শুনে কর্তব্যরত অন্য র্যাব সদস্যরা তাকে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পায়। সেই সময় তার নামে ইস্যুকৃত পিস্তল নিচে পড়ে থাকতে দেখা যায় এবং টেবিলে একটি সুইসাইড নোট পাওয়া যায়। পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ময়নাতদন্ত শেষে বিস্তারিত জানানো হবে।’