ডুবে যাওয়ার আট দিনের মাথায় উদ্ধার হলো ‘রজনীগন্ধা’

অবশেষে টানা আট দিনের মাথায় পদ্মা নদীতে ৯টি ট্রাকসহ ডুবে যাওয়া ইউটিলিটি ফেরি ‘রজনীগন্ধা’ উদ্ধার হয়েছে। বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টার দিকে ফেরিটি উদ্ধার করে উদ্ধারকারী জাহাজ ‘প্রত্যয়’।

বুধবার রাত ১০টার দিকে ডুবে যাওয়া ফেরিটিকে সম্পূর্ণরূপে পদ্মার জলের ওপর ভাসিয়ে তোলা হয়। পরে রাত ১১টার দিকে ফেরিটি ভাসিয়ে পাটুরিয়া ঘাটের ভাটিতে নয়াকান্দি এলাকার পদ্মার তীরে নিয়ে রাখা হয়।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ), ফায়ার সার্ভিস ও বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ডুবুরি দল ও উদ্ধারকর্মীদের যৌথ প্রচেষ্টায় নানা প্রতিকূলতার মধ্যে পদ্মা নদীর তলদেশ থেকে এই ফেরি উদ্ধারের মতো চ্যালেঞ্জিং কাজটি করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্ধার কার্যক্রমের ইউনিট প্রধান বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত পরিচালক আবদুস সালাম।

তিনি বলেন, ‘পদ্মায় ফেরিটি ডুবে যাওয়ার সময় তীব্র স্রোতের কারণে পানির নিচে গিয়ে ফেরিটি উল্টে যায়। এ অবস্থায় গত এক সপ্তাহে পলি পড়ে ফেরিটির ওজন আরও বেড়ে যায়। ২৪০ টন ওজনের ফেরিটি ৩০০ টন ছাড়িয়ে যায়। ফলে উদ্ধার জাহাজ হামজা ও রুস্তম ফেরিটি তুলতে ব্যর্থ হলে ঘটনার দুদিন পর উদ্ধারকাজে যুক্ত করা হয় বিআইডব্লিউটিএ’র শক্তিশালী উদ্ধার জাহাজ প্রত্যয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রত্যয়ের সক্ষমতা রয়েছে ২৫০ টন। যে কারণে উদ্ধারকাজে একটু সময় বেশি লেগেছে। ফেরিটি উদ্ধার করতে গিয়ে পলি অপসারণ, উল্টো ফেরিটিকে সোজা করাসহ নানাবিধ কৌশল অবলম্বন করতে হয়েছে। বিআইডব্লিউটিএ, ফায়ার সার্ভিস, বাংলাদেশ নৌবাহিনী যৌথভাবে উদ্ধারকাজে অংশ নিয়ে বুধবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ফেরিটি সোজা অবস্থায় উদ্ধার করতে সক্ষম হয়।’

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) আরিচা কার্যালয়ের উপমহাব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শাহ মোহাম্মদ খালেদ নেওয়াজ বলেন, ‘বুধবার রাত ১১টার দিকে ফেরিটি তীরে ভেড়ানো সম্ভব হয়েছে। ফেরিটিকে এখন নদীর পাড়ে এনে রাখা হয়েছে।’ বৃহস্পতিবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে ওই এলাকায় ফেরিটির ধোয়ামোছার কাজ চলছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

ফেরি ‘রজনীগন্ধা’ উদ্ধারে নৌবাহিনীর ডুবুরি দলের প্রধান লেফটেন্যান্ট শাহ পরাণ ইমন বলেন, ‘নদীতে প্রচণ্ড স্রোত, কুয়াশা ও কনকনে শীতের কারণে উদ্ধার অভিযান কার্যক্রম বিঘ্নিত হওয়ায় ফেরিটি তুলতে বিলম্ব হয়। অবশেষে নানান পরিস্থিতি মোকাবিলার পর টিম ওয়ার্কের মাধ্যমে ফেরিটিকে নদীর তলদেশ থেকে ওপরে ওঠানো সম্ভব হয়েছে।’

এদিকে, এ উদ্ধার কার্যক্রমে অপ্রত্যাশিত নানা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে বলে জানান বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত পরিচালক (নৌপথ) মো. আবদুস সালাম। তিনি বলেন, ‘বুধবার বিকালের মধ্যে উদ্ধারকারী জাহাজ প্রত্যয় দিয়ে ফেরিটিকে উল্টিয়ে সোজা করার পর টেনে ভাসিয়ে নদীর তীরে নেওয়া সম্ভব হয়েছে।’

উল্লেখ্য, গত ১৭ জানুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ৯টি ট্রাকসহ ডুবে যায় ফেরিটি। উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা ২০ জনকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনায় নিখোঁজ ছিলেন ফেরির দ্বিতীয় ইঞ্জিন মাস্টার হুমায়ুন কবির। সোমবার বিকালে দুর্ঘটনাস্থলের প্রায় ১৩ কিলোমিটার ভাটিতে হরিরামপুর উপজেলার বাহাদুরপুর এলাকায় পদ্মা নদী থেকে তার লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী দল। অষ্টম দিনে আরও একটি ট্রাকসহ মোট ৯টি ট্রাক উদ্ধার করা হয়েছে।