মৃত্যুর ৬ মাস পর কবর থেকে তোলা হলো আ.লীগ নেতার মরদেহ

মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার হাট বালিগাঁও কবরস্থান থেকে মৃত্যুর ছয় মাস পরে আওয়ামী লীগ নেতা আজগর হোসেন চঞ্চল বেপারীর মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে কবরস্থান থেকে তার মরদেহ তোলা হয়।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন মুন্সীগঞ্জ জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওমর শরীফ ফাহাদ।  

নিহত আজগর হোসেন চঞ্চল মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বালিগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

বাদী নিহতের স্ত্রী সুমি আক্তারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫টার দিকে নিজের কাজের জন্য বাড়ির বাইরে যান চঞ্চল। পরে রাত সাড়ে ১২টার দিকে চঞ্চল তার স্ত্রীর মোবাইলে ফোন দিলে কিছু লোকের বাগবিতণ্ডা ও চেঁচামেচি শুনতে পান। এ সময় সঙ্গে কে বা কারা আছে জানতে চাইলে চঞ্চল জানায়, তার সঙ্গে বালিগাঁও গ্রামের রিটু, হাবিবুর রহমান সোহেল, নিতাই দাস ও উত্তম সরকার সানীসহ আরও কয়েকজন রয়েছে।

পরে ওই দিন রাতেই ইসলামপুর রাস্তার পাশে মুমূর্ষু অবস্থায় চঞ্চলকে দেখতে পান বালিগাঁও বাজারের ব্যবসায়ী আমির হোসেন। এ সময় তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠান। পরদিন (১১ সেপ্টেম্বর) ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। নিহতের পরিবারকে ভুল বুঝিয়ে‌ ময়নাতদন্ত ছাড়াই দাফন করতে বাধ্য করা হয়।

পরে সুমি আক্তার জানতে পারেন, তার স্বামীর বুকের ৯টি এবং পিঠের তিন জায়গায় হাড় ভাঙা ছিল। দুষ্কৃতিকারীরা মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় চঞ্চল মারা গেছে বললেও মরদেহে আঘাতের যে চিহ্ন থাকার কথা তা ছিল না।

তিনি আরও জানান, চঞ্চলের সঙ্গে থাকা ব্যক্তিকে মারা যাওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে এ বিষয়ে সঠিক ব্যাখ্যা দিতে পারেনি। এরপর তার স্ত্রী সুমি আক্তার বাদী হয়ে মুন্সীগঞ্জ আদালতের বিজ্ঞ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ৪ নম্বর আমলি আদালতে (সিআর নম্বর ৪১৬/২৩, ধারা ৩০২/৩৪ দণ্ডবিধি) মামলা করেন। সেখান থেকেও মামলাটি খারিজ করে দিলে মুন্সীগঞ্জ জজ আদালতে ফৌজদারি রিভিশন (মোকদ্দমা নম্বর ১৫১/২০২৩) মামলা করা হয়। পরে ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে টঙ্গিবাড়ী থানাকে মামলাটি এফআইআর হিসেবে নিতে আদেশ দেন আদালত।

এ বিষয়ে মামলার বাদী সুমি আক্তার বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে ছিল। যখন আমার স্বামী চঞ্চল মারা যায় তখন আমাদের আরেকটি কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। সে সময় আমি অনেক অসুস্থ ছিলাম। বিছানা থেকে উঠতে পারিরি। অসুস্থ থাকায় বুঝতে পারিনি আমার স্বামীকে কেউ মেরে ফেলেছে। যারা আমার স্বামীকে মেরেছে তারা কৌশলে দ্রুত তার দাফনের কাজ সেরে ফেলে। পরে জানতে পারলাম, ওরা পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে গুরুতর জখম করে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বালিগাঁও গ্রামের মোফাজ্জল কমান্ডারের ছেলে রিটু, যুবলীগ নেতা হাবিবুর রহমান সোহেল, নিতাই দাস, উত্তম সরকার রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে গুরুতর আহত করে হত্যার উদ্দেশে রাস্তার পাশে নির্জন স্থানে ফেলে রেখে যায়। আমি তাদের আসামি করে মুন্সীগঞ্জ আদালতে মামলা করেছি।’

এ ব্যাপারে মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা টঙ্গীবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আল মামুন জানান, আদালতের নির্দেশে টঙ্গীবাড়ী থানায় একটি মামলা হয়। যার নম্বর ১৬(১)২৪। সেই মামলায় আদালত কবর থেকে মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের আদেশ দেন। বৃহস্পতিবার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে।