‘রমজানের আগে বাড়ি আসতে চেয়েছিল, ফিরলো লাশ হয়ে’

‘আমার ছেলে এক মাস পর পর ছুটিতে বাড়ি আসতো। কিন্তু গত দুই মাস ধরে সে ছুটি নেয়নি। ছেলে বলেছিল, ওর সঙ্গের চার অফিসার ছুটিতে গেছে। ওরা ফিরে এলে রমজানের আগে বেশিদিন ছুটি কাটিয়ে যাবে বলেছিল। রমজানের আগে আমার ছেলের আর ছুটিতে আসা হলো না। লাশ হয়ে ফিরলো। এখন আমাকে আম্মু বলে কে ডাকবে? আমি কাকে নিয়ে বাঁচবো?’

রাজধানীর বেইলি রোডের আগুনে প্রাণ হারানো নারায়ণগঞ্জের শান্ত হোসেনের মা লিপি আক্তার কান্নাজনিত কণ্ঠে এ কথাগুলো বলছিলেন। শান্ত হোসেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা ভূঁইগড় পশ্চিমপাড়া এলাকার মো. আমজাদ হোসেনের ছেলে। তিনি বেইলি রোডে গ্রিন কজি কটেজ ভবনের অথেল বার অ্যান্ড জুস নামের একটি রেস্তোরাঁয় গত ৭ মাস ধরে সহকারী সেফ হিসেবে চাকরি করতেন। তারা দুই ভাই এক বোন। বাবা সৌদি আরব থাকেন। তবে তিনি বিদেশে তেমন সুবিধে করতে না পারায় পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে শান্তই সংসারের খরচ বহন করতেন। এ কারণে তিনি উচ্চমাধ্যমিকের গণ্ডি পার হতে পারেননি।

মৃত্যুর আগে মায়ের সঙ্গে শান্তর কথা হয়েছিল, এই কথা জানিয়ে লিপি বলেন, ‘গতকাল রাতে আমার ছেলে হঠাৎ করে ভিডিও কল দিয়েছে। এমনিতে সে সচরাচর আমাকে ভিডিও কল দেয় না, অডিও কল দেয়। ভিডিও কলে সে আমাকে জিজ্ঞেস করে আম্মু কী খেয়েছো। এসব বলে সবার খোঁজখবর নিয়েছে। এর কিছুক্ষণ পরে ছোট ছেলের কাছে শুনি আমার ছেলে শান্তর প্রতিষ্ঠানে আগুন লেগেছে। এরপর তার মৃত্যুর খবর পাই।’

শান্তর বাড়িতে এখন শোকের মাতম

শবেবরাতের রাতে বাসায় এসে নামাজ পড়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, শবেবরাতের আগে একদিন ফোন করে শবেবরাতের রাতে বাসায় এসে সবার সঙ্গে নামাজ পড়বে বলে জানায়। এই অল্প সময়ের জন্য বাসায় আসতে আমি নিষেধ করেছি। এরপরও সে শবেবরাতের রাতে এসে এখানে নামাজ পড়েছে। পরের দিন সকালে চলে গেছে। এটাই ছিল শেষ দেখা।

পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য পড়ালেখা ছেড়ে শান্ত চাকরিতে যোগ দেয় জানিয়ে লিপি আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলে সবসময় হাসি-খুশি থাকতো। পরিবারের দায়িত্ব নেওয়ার জন্য পড়ালেখা ছেড়ে দিয়ে চাকরিতে যোগ দেয়। তার বাবার পাশাপাশি সে সংসারের খরচ যোগাত। ভাই-বোনের পড়ালেখার খরচ বহন করতো। আমার ছেলে আমাদের ছেড়ে চলে গেছে! আমি এখন কাকে নিয়ে বাঁচবো? আমাকে কে স্বপ্ন দেখাবে? তার বাবাও শেষবারের মতো ছেলেকে দেখার সুযোগ পেলো না।’

শুক্রবার (১ মার্চ) দুপুরে শান্ত হোসেনের মরদেহ তার গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। সেখানে জানাজার নামাজ শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার রাত ১০টায় বেইলি রোডে একটি বহুতল ভবনে আগুন লাগে। এতে এখন পর্যন্ত ৪৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।