আন্দোলনের সময় পুড়িয়ে দেওয়া নারায়ণগঞ্জের পাসপোর্ট অফিসের সংস্কার শুরু

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় পুড়িয়ে দেওয়া নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সংস্কার কাজ সাড়ে চার মাস পর শুরু হয়েছে। কাজ শেষ করতে প্রায় দুই থেকে তিন মাস সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এদিকে পাসপোর্ট অফিস পুড়ে যাওয়ার পর থেকে এ জেলায় গ্রাহক সেবা মিলছে না। পাসপোর্ট অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী সেবা পেতে পার্শ্ববর্তী তিন জেলায় যেতে হচ্ছে। এতে নানা ভোগান্তির অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে।

অফিস সূত্রে জানা গেছে, গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে নারায়ণগঞ্জ সাইনবোর্ড সংলগ্ন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। আগুনে অফিস ভবন, আসবাসপত্রসহ গ্রাহকদের বিতরণের জন্য প্রস্তুত আট হাজার পাসপোর্ট পুড়ে যায়। এতে তিন কোটি ২৭ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে অফিস কর্মকর্তারা জানান।

passport-office2

এদিকে পাসপোর্ট তৈরি, নবায়ন ও অন্য সেবার জন্য প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার মানুষ সেবা নিতে আসতেন এই কার্যালয়ে। ভবন পুড়ে যাওয়ায় এখানে সেবা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে সেবা অব্যাহত রাখতে নারায়ণগঞ্জকে তিন জোনে ভাগ করে পার্শ্ববর্তী তিন জেলার আঞ্চলিক অফিস থেকে সেবা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে কর্তৃপক্ষ। নারায়ণগঞ্জ সদর ও ফতুল্লার বাসিন্দারা কেরানীগঞ্জ, সোনারগাঁ, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজারের বাসিন্দারা নরসিংদী এবং বন্দর ও সিদ্ধিরগঞ্জের বাসিন্দাদের মুন্সীগঞ্জ জেলা আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে সেবা গ্রহণ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়।

তবে অন্য জেলায় গিয়ে সেবাগ্রহণে নানা রকম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন তারা। পড়তে হচ্ছে দালাল চক্রের হাতে। ফলে অনেকেই অপেক্ষা করছেন নারায়ণগঞ্জ কার্যালয় চালুর। প্রায়ই দূরদূরান্ত থেকে লোকজন এসে খোঁজ নিচ্ছেন কবে নাগাদ খুলবে পাসপোর্ট অফিস।

passport-office1

অন্য জেলার পাসপোর্ট করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন রবিন নামে এক যুবক। তিনি বলেন, পাসপোর্ট অফিসের পাশের এলাকায় তাদের বাড়ি। অফিসটি পুড়ে যাওয়ার তার বড় ভাইকে মুন্সীগঞ্জ জেলায় গিয়ে দীর্ঘ সময় লাইন ধরে অপেক্ষা করে কাজ সারতে হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের পাসপোর্ট অফিসের কার্যক্রম চালু হলে এই ভোগান্তিতে পড়তে হতো না বলে এই যুবক জানান। এ ছাড়া দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে। তখন টাকা দিয়ে তাড়াতাড়ি কাজ সারতে হয়েছে।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার দেওভোগ এলাকা থেকে নরসিংদী জেলায় গিয়ে পাসপোর্ট করাতে নানা ভোগান্তিতে পড়েছেন আব্দুস সালাম নামের এক যুবক। তিনি বলেন, যানজট ঠেলে সেই নংসিংদী গিয়ে পাসপোর্টের কাগজপত্র জমা দিয়েছি। সেখানে দালালকে টাকা না দিলে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হয়। ফলে টাকা দিয়ে কাজ করাতে হয়েছে। এখনও পুরো কাজ শেষ হয়নি। নারায়ণগঞ্জে পাসপোর্ট অফিস থাকলে এতো ভোগান্তিতে পড়তে হতো না।

passport-office3

এদিকে এক সপ্তাহ ধরে নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। সংস্কার কাজের তদারকি করছেন শ্রমিক থান্ডু হাওলাদার। তিনি বলেন, ভবনের দেওয়ালের আস্তরন ও টাইলস নষ্ট হয়ে গেছে। সব আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। গ্রিল ও দরজা অপসারণের কাজ চলছে। সংস্কার কাজ শেষ করতে প্রায় দুই থেকে তিন মাস সময় লাগতে পারে। তবে বিদ্যুৎ ও পানির সংকটের কারণে কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে।

পাসপোর্ট অফিস সংস্কার কাজ সম্পর্কে নারায়ণগঞ্জ জেলা গণপূর্ত বিভাগের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, কয়েকদিন আগে পাসপোর্ট অফিসের মেরামত কাজ শুরু হয়েছে। ভবনের স্ট্রাকচার ঠিক আছে। তবে ভবনের পলেস্তারা, টাইলস, গ্রিল, দরজাসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র পুড়ে ও ভেঙে নষ্ট হয়ে গেছে। এসব সংস্কারের কাজ চলছে। কাজ শেষ করতে প্রায় দুই মাস সময় লাগবে বলে ঠিকাদার জানিয়েছেন। আশা করি, খুব দ্রুত কাজ শেষ করে কার্যক্রম শুরু হবে।