মু্ন্সীগঞ্জে প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণির নতুন বইয়ের জন্য প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নেওয়া হয়েছে ১০০ টাকা করে। বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণি থেকে উত্তীর্ণ হওয়া শিক্ষার্থীদের ছাড়পত্র দিতেও নেওয়া হয়েছে ২০০ টাকা। অথচ সরকার বিনামূল্যে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বই দিয়েছে। ছাড়পত্রও দেওয়ার কথা ছিল বিনামূল্যে। সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের লেখাপড়া ফ্রি।
টাকা নেওয়ার এমন অভিযোগ উঠেছে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নের বিনোদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। তবে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অসত্য বলে দাবি করেছেন বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক শামসুল ইসলাম সিকদার।
বৃহস্পতিবার (২ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বিদ্যালয়ে পড়ুয়া বিভিন্ন শ্রেণির কমপক্ষে ১০-১৫ শিক্ষার্থী এবং কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, সরকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করেছে। অথচ বিনোদপুর সরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কেউ সে নিয়ম মানছে না।
তাদের দাবি, নতুন বই দেওয়ার জন্য প্রতিটি শ্রেণির একজন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ১০০ টাকা করে নিয়েছেন শিক্ষকরা। এবার এ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণি থেকে যারা উত্তীর্ণ হয়েছেন। সেসব শিক্ষার্থীরা উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভর্তি হচ্ছে। সেই শিক্ষার্থীদের ভর্তির জন্য পঞ্চম শ্রেণির ছাড়পত্র প্রয়োজন। যেসব শিক্ষার্থীরা ছাড়পত্র নিতে এসেছে তাদের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে নিয়েছেন শিক্ষকরা।
খোঁজ নিয়ে যানা গেছে, এ বছর বিনোদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণিতে ১৩৫, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ১৩০, তৃতীয় শ্রেণিতে ১১৫, চতুর্থ শ্রেণিতে ১১৫ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৭৫ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে গত দুই দিনে প্রথম শ্রেণির ৭০, দ্বিতীয় শ্রেণির ৮২, তৃতীয় শ্রেণির ১০১ জন শিক্ষার্থী নতুন বই পেয়েছেন। তবে শিশু ও পঞ্চম শ্রেণির কোনও শিক্ষার্থীই বই পায়নি। তবে দুয়েকদিনের মধ্যে নতুন বই পাবেন বলে জানিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ।
নতুন বই নেওয়া চতুর্থ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, নতুন বই দেওয়ার কথা বলে আমাদের বুধবার বিদ্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয়। পরে স্যার ও ম্যাডামরা আমাদের কাছে ১০০ টাকা করে নেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিদ্যালয়টির তৃতীয় শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, গ্রামের স্কুল, স্যারেরা যা কয় তাই আমরা বিশ্বাস করি। আমরা জানতাম, সরকারি কোন খরচ নাই। কী কারণে ১০০ টেকা হেরা নিবো জিগাই ছিলাম। স্যারেরা কইলো বই দিবো খরচ আছে। আবার কেউ কইলো স্কুলের আয়া খালারে দিবো।
এ ছাড়া পঞ্চম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ ৬৬ শিক্ষার্থীর ছাড়পত্র বাবদও এ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা নিয়েছেন ২০০ টাকা করে।
পঞ্চম শ্রেণি থেকে উত্তীর্ণ শিক্ষার্থী আব্দুল খালেক বলে, আমি বিনোদনপুর রামগোপালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছি। সেখানে প্রাইমারি স্কুলের টিসি চায়। টিসি নিতে এলে ২০০ টাকা নিয়েছেন শিক্ষকরা।
নতুন বই এবং ছাড়পত্র দেওয়া বাবদ টাকা নেওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির সহকারী শিক্ষকরা তা এড়িয়ে যান।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামসুল ইসলাম সিকদার টাকা নেওয়ার বিষয়টি মিথ্যা। তিনি দাবি করেন, বই এবং ছাড়পত্র দিয়ে কারও কাছ থেকে কোনও ধরনের টাকা নেওয়া হয়নি। যারা বলেছে তারা ভুল বলেছে। আমি এ কয়দিন বই আনা-নেওয়া নিয়ে অনেক ব্যস্ত ছিলাম।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে অন্য একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক বলেন, বই এর বিনিময়ে টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমিও শুনতে পেরেছি। আমার চাকরি জীবন প্রায় শেষের দিকে, এমন ঘটনা এই প্রথম শুনলাম। এমনটি করা কোনও শিক্ষকের জন্যই উচিত নয়।
এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল মোমেন মিয়া বলেন, নতুন বই দেওয়া এবং সনদ দেওয়া বাবদ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে এক টাকা নেওয়ার সুযোগ নেই। যদি স্কুলের শিক্ষকরা এমন কাজ করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।