গাজীপুরের টঙ্গীতে শ্রবণ ও বাকপ্রতিবন্ধী নারীর লাশ উদ্ধারের ঘটনার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। একইসঙ্গে এ ঘটনায় এক দম্পতিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই নারীকে হাত, পা ও মুখ বেঁধে শ্বাসরোধে হত্যার দায় স্বীকার করেছেন গ্রেফতার দম্পতি।
গতকাল রবিবার বিকালে গাজীপুর মেট্রোপলিটন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন তারা।
সোমবার (২৬ মে) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গাজীপুর পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ এসব তথ্য জানিয়েছেন। গ্রেফতারকৃত দম্পতি হলেন- সাইফুল ইসলাম উজ্জল (২৮) ও তার স্ত্রী সাদিয়া আক্তার (১৯)। তারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার নিন্দারাবাদ এলাকার বাসিন্দা। টঙ্গীর গাজীবাড়ি পুকুরপাড় এলাকার ভাড়া বাসায় থাকতেন। রবিবার সকাল ৮টার দিকে নিজ বাসা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
নিহত রাবেয়া সাবরিন (৩৩) পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলার উত্তর পটখালী গ্রামের সেলিম হাওলাদারের মেয়ে। তিনি টঙ্গীর শারীরিক প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্টে (মৈত্রী শিল্প) কম্পিউটার অপারেটর পদে চাকরি করতেন এবং পুকুরপাড় এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন।
পিবিআই জানায়, বছরখানেক ধরে পুকুরপাড় এলাকার একটি ভবনের দোতলায় কক্ষ ভাড়া নিয়ে মায়ের সঙ্গে থাকতেন সাবরিন। ১৯ মে সকালে বাসায় একাই ছিলেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এক প্রতিবেশী কক্ষটির দরজা বাইরে থেকে আটকানো দেখতে পান। পরে দরজা খুলে দেখেন বিছানার ওপর ওড়না ও গামছা দিয়ে সাবরিনের হাত, পা ও মুখ বাঁধা লাশ। এরপর পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ওই ঘটনায় সাবরিনের মা বাদী হয়ে অজ্ঞাতদের আসামি করে টঙ্গী পূর্ব থানায় হত্যা মামলা করেন। পরে ছায়াতদন্ত শুরু করে পিবিআই।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গাজীপুর পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) বিশ্বজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘১৯ মে সকালে সাবরিন বাসার দরজা খোলা রেখে বাইরে চুলায় রান্না বসাতে যান। এ সুযোগে ওই দম্পতি তার বাসায় ঢুকে লুকিয়ে থাকেন। কিছুক্ষণ পর বাসায় ঢুকলে তার হাত, পা, মুখ বেঁধে হত্যা করে ঘরের দরজা বাইরে থেকে লাগিয়ে দেন। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রান্না পুড়ে যাওয়ার গন্ধ পেয়ে পাশের ভাড়াটিয়া সাদিয়া আক্তার সাথী সাবরিনকে ডাকতে এসে দরজা বন্ধ দেখতে পেয়ে বাড়ির মালিককে খবর দেন। বাড়ির মালিক ঘরের দরজা খুলে লাশ বিছানায় পড়ে থাকতে দেখেন। খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তদন্তে ঘটনায় সরাসরি জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়ায় একই বাসার পাশের কক্ষের ভাড়াটিয়া সাইফুল এবং তার স্ত্রী সাদিয়াকে গ্রেফতার করা হয়। ঘটনার পর থেকে আসামিরা ওই বাসায় ছিলেন। রবিবার আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেন তারা। জবানবন্দিতে তারা জানিয়েছেন, সাইফুল একটি গার্মেন্টসে চাকরি করেন এবং অনলাইন জুয়ায় আসক্ত। তার দুই মাসের বাসা ভাড়া বাকি থাকায় স্ত্রী সাদিয়ার সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া হতো। পাশের বাসার সাবরিনের বোনাস পাওয়ার খবর জানতে পেরে ওই টাকা চুরির পরিকল্পনা করেন তারা। ওই দিন সকাল ৬টার দিকে সাবরিনের বাসায় ঢুকেন। একপর্যায়ে হাত, পা ও মুখ বেঁধে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন। পরে সাবরিনের ব্যাগ থেকে এক হাজার ২৫০ টাকা ও বাসা থেকে দুই কেজি চাল নিয়ে যান তারা।’
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘সাবরিন নিহত হওয়ার কিছু দিন আগে তার একটি মোবাইল চুরি হয়েছিল। সেই মোবাইলের সূত্র ধরে পাশের ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া স্বামী-স্ত্রীকে গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে হত্যার দায় স্বীকার করেন। সামান্য কিছু টাকার জন্য হত্যা করেছেন তারা।’